রাজনীতিতে আবারও ফিরবেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ এর একমাত্র সন্তান তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।
আজ একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার বোন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, তিনি আরও জানিয়েছেন যে, আগামী আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলীয়
নেতৃত্বে আসছেন।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাস টি হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ-
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।
TANJIM AHMAD ( Sohel Taj ), in all probability, is set to assume leadership in party hierarchy in the upcoming councils of Bangladesh Awami League.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশনে তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) দলীয় নেতৃত্বে আসছেন ইনশা’আল্লাহ l
জয় বাংলা ! জয় বঙ্গবন্ধু ! জয়তু শেখ হাসিনা !!
বাংলাদেশ চিরিজীবি হোক। 🇧🇩🇧🇩
Mahjabin Ahmad Mimi
Thursday, 11th August 2022.
প্রসংঙ্গত, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন ‘অভিমান’ করে। ইস্তফা দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য পদ থেকেও। তারপর বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি দিলেও কয়েকবছর বাদে দেশে ফেরেন। তবে দেশে ফিরলেও আর ফিরেননি রাজনীতিতে। তিনি তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের একমাত্র পুত্র।
দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও সোহেল তাজ এখন নানা ইস্যুতে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কাজ করছেন স্বাস্থ্য ও সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে। সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে নিয়ে আলোচনা আছে- সোহেল তাজ কি আবারও ফিরবেন রাজনীতিতে?
নিজে শরীরচর্চায় ব্যস্ত সোহেল তাজ গড়ে তুলতে চান সুস্থ ও সবল তরুণ সমাজ। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য স্বাস্থ্যবান তরুণদের বিকল্প নেই। এই ভাবনা থেকে খুলেছেন ‘ইন্সপায়ার ফিটনেস সেন্টার’।
টেলিভিশনে এসেছেন ‘হটলাইন কমান্ডো’ নিয়ে। যেখানে কথা বলেন, সামাজিক সচেতনতা নিয়ে। কথা বলছেন, নারী নির্যাতন, মাদক, সড়ক দুর্ঘটনা, খাদ্যে ভেজালসহ নানা ইস্যুতে। রাজনৈতিক বিষয়েও ফেসবুক লাইভে সক্রিয় তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার বা দলে সরাসরি কোনো পদে না থাকলেও নিজের কর্মতৎপরতা দিয়ে আলোচনায় থাকছেন সোহেল তাজ। সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে সোহেল তাজ এ বিষয়েও কথা বলেছেন।
রাজনীতিতে ফিরে আসার বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও অনাগ্রহ যে নেই, তা বলেছেন স্পষ্টই। বলেন, ‘যদি দেশের কোনোদিন প্রয়োজন হয়, অবশ্যই। আমাদের রক্তই হচ্ছে এই দেশের জন্য। দিতে রাজি আছি। নির্দ্বিধায়।’
সোহেল তাজ দীর্ঘদিন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ফিরে এসে ২০১৬ সালে দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সোহেল তাজকে পুত্রস্নেহে বুকে জড়িয়ে নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সেই ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী সোহেল তাজকে বলেছিলেন, সরকারে নয়, দলে সক্রিয় হতে। জবাবে বঙ্গতাজপুত্রও কথা দিয়েছিলেন, জনগণের সেবক হিসেবে তিনি কাজ করে যাবেন।
তখন ধারণা করা হয়েছিল, সোহেল তাজ হয়তো আবারও রাজনীতিতে ফিরবেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগেও গুঞ্জন ছিল, কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন তিনি। যদিও তার কিছুই ঘটেনি। সোহেল তাজও প্রকাশ্যে দলীয় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও সক্রিয় হননি আর।
সোহেল তাজের জন্ম গাজীপুরে কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে ১৯৭০ সালের ৫ জানুয়ারি। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় বোন শারমিন আহমদ রিপি; মেজো বোন বিশিষ্ট লেখিকা ও কলামিস্ট এবং গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এবং ছোট বোন মাহজাবিন আহমদ মিমি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোহেল তাজের পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম নেতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর ওই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে গুলি করে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন কারাগারে হত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার মধ্যে অন্যতম।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তাজউদ্দীন আহমেদের সহধর্মিনী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেই পরিবারের সন্তান হিসেবে সোহেল তাজের রাজনৈতিক সক্রিয়তা খুবই প্রত্যাশিত।
তবে সোহেল তাজ মনে করেন, সরাসরি রাজনীতি না করেও জনগণের জন্য কাজ করা যায়। যে যার জায়গা থেকে মানুষের সেবায় ইচ্ছে থাকলে কাজ করতে পারে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে ভুল ধারণা আছে, ভালো কাজ করতে হলে কেবল রাজনীতির মাধ্যমেই সম্ভব। আমি ভিন্ন চিন্তায় বিশ্বাসী। মনে করি, দেশের জন্য সমাজের জন্য করতে চাইলে যার যে অবস্থান রয়েছে সেখান থেকেই কাজ করা সম্ভব।’
২০০১ সালের নির্বাচনে গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সোহেল তাজ। ২০০৮ সালে একই আসন থেকে বিজয়ী হন নৌকা প্রতীকে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। একই বছরের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন। যদিও তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে সেসময় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ওঠে।
( জয়বাংলা প্রতিদিন ডটকম, ১১ আগষ্ট )