এই চাপের বাইরেও আমলারা এখন নানামুখী চাপে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমলারা এখন পুরোপুরিভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আমলাদের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বা ছাত্রজীবনে যারা ছাত্রলীগ করে এসেছে তাদের সঙ্গে অন্যান্য আমলাদের মতপার্থক্য এবং বিরোধ ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে। ছাত্রলীগ করে আসা অনেক আমলা বলছেন যে, ছাত্রলীগ করার অপরাধে তাদেরকে ভালো জায়গায় সচিব করা হচ্ছে না। ভালো জায়গায় সচিব করা হচ্ছে বিশেষ কোটায়। সাম্প্রতিক সময়ে সচিব হয়েছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এরকম কেউই ভালো জায়গায় নেই বলে অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো আমলা। তারা বলছেন যে,পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার কিংবা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন বা ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা অন্যরা সবাই কোণঠাসা হয়ে আছেন। ভালো ভালো জায়গাগুলোতে দেওয়া হচ্ছে যারা অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এরা কতটুকু সরকারের সংকটে পাশে থাকবে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চর্তুমূখী চাপে আমলারা
সরকার যখন সংকটে তখন আমলাদের সমালোচনা বাড়ছে। আমলারা নানামুখী চাপের মুখে পড়ছেন। সবশেষ চাপ সৃষ্টি হয়েছে হাইকোর্টের আজ এক রায়ের প্রেক্ষিতে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ আজ এক রায়ে ফৌজদারি মামলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধানকে বেআইনি হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং চিহ্নিত করে এটি বাতিল করে দিয়েছে। তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া সরকারি চাকরি আইনের ৪১ এর ১ ধারা বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেয়। রায়ে বলেছে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ওই ধারা সংবিধান পরিপন্থী এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এর ফলে আমলারা একটা বড় ধরনের চাপের মুখে পড়লেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে এই আইন হওয়ার পর থেকে আমলাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার করা এক ধরনের বন্ধই ছিল। এই সময় বিভিন্ন ফৌজদারি অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের একাধিক আমলার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছিল। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের ঘটনা কিংবা বরিশালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ঘটনা সবই ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বলে কোনো কোনো মহল মনে করছে।
সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে মধ্যে প্রকাশ্যে আলোচনা হচ্ছে। এটি আমলাতন্ত্রের মধ্যে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এখন প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কিছু কিছু আমলা সরকারের সর্বনাশ করছেন এবং গোপনে গোপনে নানারকম সংকট তৈরি করছেন। এটিও আমলাদের মধ্যে আরেকটি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া মাঠ প্রশাসনে এখন নানা রকম অস্থিরতা শুরু হচ্ছে। মাঠ প্রশাসনের এই অস্থিরতাও সরকারের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইসব নানামুখী চাপে নির্বাচনের বছরে কম সময়ে আগে আমলাদের এই রকম নানামুখী চাপে সরকারের জন্য একটি অস্তস্তি অবস্থা সৃষ্টি করেছে বলেই অনেকে মনে করেন।