শনিবার (১৫ এপ্রিল) ৫ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এই মনোনয়নে সবচেয়ে বড় চমক ছিল বরিশাল সিটি করপোরেশন। সেখানে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়নে দেয়া হয়েছে। খোকন সেরনিয়াবাতের মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্যই শুধু নয় বরং বরিশালের রাজনীতির জন্য একটি বাঁক পরিবর্তন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
খোকন সেরনিয়াবাত আবার সম্পর্কে সাদিক আবদুল্লাহর চাচা, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই অসুস্থ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি কি বার্তা দিলেন? এর মধ্যে দিয়ে কি বরিশালের রাজনীতিতে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো? এই প্রশ্ন এখন রাজনীতিক অঙ্গনে ঘুরে ফিরে আসছে।
আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে বরিশালের একক কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি বরিশালের নীতি নির্ধারক হয়ে গিয়েছিলেন এবং আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর কথাই শেষ কথা এমন একটি ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল। অন্য কোনো নেতাই সেখানে জায়গা করে নিতে পারেননি। এমনকি জাহাঙ্গীর কবির নানকের মত কেন্দ্রীয় নেতারাও বরিশাল থেকে সরে এসে ঢাকায় রাজনীতি শুরু করেছিলেন। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর কথাই বরিশালের আইন এমন একটি ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল।
আর ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বরিশালের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে আরেকজন গডফাদারের। তিনি হলেন বিএনপি’র মজিবুর রহমান সারোয়ার। একবার সারোয়ার একবার হাসনাত। এভাবেই বরিশালের রাজনীতি চলছিল যুগ যুগ ধরে। সাম্প্রতিক সময় বিএনপিতে সারোয়ার যুগের অবসান ঘটেছে। সারোয়ারকে বাদ দিয়ে বরিশালের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইভাবে এবার আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পুত্র সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয়া হল। এর মধ্য দিয়ে বরিশালের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগও বাঁক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তাদের মতে, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং তার পুত্রের কারণে বরিশালের রাজনীতিতে ত্যাগী পরীক্ষিতরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছিল, রাজনীতির সুষ্ঠু বিকাশের ধারা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল এবং এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী পরিস্থিতি বরিশালে বিরাজ করছিল। হাসনাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে কথা বলা অপরাধ সমতুল্য হিসেবে বরিশালে বিবেচিত হচ্ছিল এবং তারচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা হয়েছিল সাদিক আবদুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের সময়।
সাদিক আবদুল্লাহ এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যে পরিস্থিতিতে কোনো ভিন্নমত এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্যেও যদি কেউ সাদিক আবদুল্লাহর মতের বিরোধিতা করত তাহলে তার উপর খরদ মেনে আসত।
আর এ বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সব জেনেছেন এবং বুঝেছেন। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয়। এ জন্য তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলত না এবং নিরবে অত্যাচার সহ্য করে ত্যাগী পরীক্ষিতরা সরে যেত।
এখন সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দেয়ার মধ্যে দিয়ে বরিশালে যারা সুস্থ রাজনীতি করেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে চান তাদের জন্য একটি ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হল বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এর ফলে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বরিশাল রজত্বের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা যে, এমনিতেই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বয়স হয়েছে এবং এখন সেখানে নেতৃত্ব পরিবর্তনের একটি সূচনা পর্ব শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সূত্র: বাংলা ইনসাইডার