২০০৭ সালে এক-এগারো সরকার আসার আগে ড. ইউনূসের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সামরিক কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের বাসভবনে গিয়ে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ড. ইউনূস সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তিনি বলেছিলেন, আমার দীর্ঘ সময় দরকার। সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে তিনি রাজি হননি। তার বদলে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নাম তিনি প্রস্তাব করেছিলেন।
এবার অবশ্য তিনি অনাগ্রহী নন। বরং এবার নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হওয়ার জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন ড. ইউনূস। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ কামনা করে ইউনূস যে চিঠি দিয়েছেন সেই চিঠির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, কিভাবে রাজনীতির বর্তমান সংকটের অবসান হতে পারে- এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এবং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হতে তিনি রাজি হয়েছেন, যে সরকার সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক উর্ধ্বতন কংগ্রেসম্যানের কাছে ই-মেইল বার্তায় ড. ইউনূস তার বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন। তার ই-মেইল বার্তার পর অন্তত দুজন কংগ্রেসম্যান ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন এবং তারা ড. ইউনূসের সাথে কথা বলেন। ড. ইউনূস বর্তমান পরিস্থিতি কোন দৃষ্টিতে দেখেন সে সম্পর্কে তারা বিস্তারিত জানতে চান। এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী সে সম্পর্কেও জানতে চান।
বিভিন্ন সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে ড. ইউনূস মনে করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ এবং জাতিসংঘের এখন বাংলাদেশে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা উচিত। এই হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা উচিত। সরকার যদি শেষপর্যন্ত সরে যায় সেক্ষেত্রে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে পারে এবং সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রস্তুত।
প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে ড. ইউনূস কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের জন্য আহ্বান জানালেন। কেনই বা তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হওয়ার জন্য এত মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূস অত্যন্ত স্বার্থপর একজন মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারেন। যেহেতু তার বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতি, অর্থ পাচারের মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে এবং এই সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে এত গভীর তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যে ড. ইউনূসের বাঁচার পথ খুবই কম। আর এটি বুঝতে পেরেই তিনি এখন এই পথে হাটছেন।
এর আগে তিনি তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে হয়রানি, মিথ্যা, অসত্য বলেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক কোনও মহলই ড. ইউনূসের আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী হননি। এটা কোনও দেশের রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে না। বিচার প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ হয় সেটি বিভিন্ন মহল চেয়েছে এবং তারা বিচার প্রক্রিয়ার ওপর নজরও রাখছে। আর এ কারণেই তার মামলা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা না পেয়ে এখন ড. ইউনূস সরকার পতনের ফর্মুলা দিচ্ছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রভাবিত করে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার যে ষড়যন্ত্র সেই ষড়যন্ত্রের একটি অংশের বাস্তবায়ন ড. ইউনূস করছেন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে
করেন।