হুড খোলা জিপে মনিকা চাকমা, রুপনা চাকমা, আনুচিং মগিনি, আনাই ও ঋতুপর্ণা চাকমা। হাতে লাল-সবুজ পতাকা, সামনে-পেছনে গাড়ির সারি, আর তাদের দেখতে সড়কের দু’পাশে মানুষের ভিড়।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মানুষ এমনই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ দলের পাঁচ ফুটবলারকে।
বুধবার বিকালে জামালখান ডা. আবুল হাশেম চত্বরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী।
চত্বর ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল। আর সাফজয়ীদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস।
‘আঁরার মাইয়া, আঁরার গর্ব’ আঞ্চলিক ভাষায় এই শিরোনামে সংবর্ধনার আয়োজনকারী দৈনিক আজাদী’র সম্পাদক এম এ মালেক অনুষ্ঠানে বলেন, “তাদের সম্মান দিতে পেরে আজ আমরা সম্মানিত।
“শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাবে। এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এদের দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হবে। শুধু সাফ নয়, এশিয়া ও বিশ্ব মঞ্চে ওদের হাত ধরেই আমরা এগিয়ে যাব।”
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৫ ফুটবলারের সব সময়ের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ঘোষণাও দেন মালেক।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা এই ৫ নারী ফুটবলারের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কেকও কাটা হয়।
অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে সাফজয়ী নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, “আমরা গর্বিত। খুব ভালো লাগছে, আনন্দ লাগছে। আজ খুশির দিন। সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আপনারা পাশে ছিলেন। ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন। আপনাদের সীমাহীন সমর্থন আগামী দিনেও আমাদের মনোবল দৃঢ় করবে।”
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি কামরুন মালেক বলেন, “দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে নারীরা আজ জয়ী হয়েছেন। অদম্য সাহস ও মনোবলের সঙ্গে সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। আজ তার ফল পাওয়া গেছে।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “এখানে থেমে থাকলে হবে না। কঠোর পরিশ্রমের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে এশিয়ার সেরা হওয়া যায়। এই মেয়েদের হাত ধরে নারী ফুটবল এগিয়ে যাবে।”
সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, “এই মেয়েরা বাঙালির মাথা উঁচু করে দিয়েছে।”
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, “মেয়েদের এই অর্জন পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে। অনুপ্রাণিত করবে।”
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “নারীদের বিজয়ে মনে হচ্ছে আমি নিজেই জয়ী হয়েছি। তাদের জয়ের ছোঁয়া আমি পেয়েছি। সাফ জয়ের খুশির রেশ ও আনন্দ সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী জয়ের জন্য জাতি অপেক্ষায় আছে। আপনারা জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।”
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান মোবাইলে যুক্ত হয়ে বলেন, “সাফ জয় করে মেয়েরা জাতির জন্য অনন্য সম্মান বয়ে এনেছে। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ চেয়ারম্যান লায়ন নিশাত ইমরান বলেন, “তোমরা দেখিয়ে দিয়েছো, আমরা মেয়েরা সব পারি। যাদের মনে এতদিন দু:খ ছিল- আমার মেয়ে আছে, ছেলে নেই। সেই অভিভাবকরা এখন থেকে আর আফসোস করবেন না। মেয়েরা প্রমাণ করেছে এ যুগে তারা সব পারে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মনজুর আলম ও স্থানীয় জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বক্তব্য রাখেন।
আনন্দ ধ্বনিতে সাফ জয়ী নারীদের বিদায় জানায় নগরবাসী। তখন তাদের গলায় বিজয়ের মালা।
খবর: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম