রাজনীতি যখন জনকল্যাণের মূলধারা থেকে সরে গিয়ে লোভ, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারে নিমজ্জিত হয়, তখন দেশ ও জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একসময় অর্থ আর ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে আসক্ত হয়ে পড়া কিছু নেতার কারণে আওয়ামী লীগও আজ সংকটের মুখোমুখি। “যে পশু একবার রক্তের স্বাদ পেয়েছে, সে রক্ত ছাড়া সন্তুষ্ট হতে পারে না”- এই প্রবাদের মতোই, কিছু নেতার লোভ আর দুর্নীতি দল ও দেশের বড় ক্ষতি করেছে।
টিআর-কাবিখা, কমিটি বানিজ্য এবং টেন্ডার থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা নেতাদের আর কেউ দেখতে চায় না। দলের ভাবমূর্তি ধ্বংসকারী এসব নেতাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। কারণ, তারা শুধু দলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে না, বরং জনগণের আস্থাও ধ্বংস করেছে। সৎ ও জনকল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব ছাড়া দলের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ রক্ষা সম্ভব নয়।
তবে সমস্যার শিকড় শুধু নেতাদের মধ্যে নয়। কিছু ভোটারও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন। যারা সামান্য টাকার লোভে সৎ-অসৎ যাচাই না করে দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারাও দায়ী। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, সামান্য আর্থিক লোভে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করার অধিকার কারও নেই।
দলের ভেতরে থাকা কিছু অন্ধ কর্মীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। যারা নেতার বিলাসবহুল জীবন দেখে মুগ্ধ হয়ে অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করে, তারা দলের শক্তি নয়, বরং দুর্বলতার কারণ। প্রকৃত কর্মীরা হবে দেশ ও জনগণের সেবায় নিবেদিত। অন্ধ আনুগত্য নয়, দায়িত্ববোধ ও ত্যাগের মনোভাবই প্রকৃত কর্মীর পরিচয়।
সমাধানের একমাত্র পথ হলো নেতৃত্বে শুদ্ধি আনা। দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী এবং স্বার্থান্বেষী নেতাদের দল থেকে সরিয়ে সৎ, আদর্শবান ও সাহসী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যেন টাকার বিনিময়ে ভোটের অধিকার বিক্রি না হয়।
আওয়ামী লীগকে আজ শুদ্ধি অভিযানের পথে হাঁটতে হবে। কারণ দলের কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ—কেউ আর দুর্নীতিগ্রস্ত, রক্ত খাওয়া নেতাদের দেখতে চায় না। দলের ভাবমূর্তি ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সৎ নেতৃত্ব এবং নৈতিক রাজনীতির বিকল্প নেই। দল, জনগণ এবং কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আমরা একটি উন্নত, ন্যায়পরায়ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
লেখকঃ মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন। সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মী।