স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন শহীদ নূর হোসেন। তার সেই মহৎ ত্যাগের দিন আজ ১০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’। ১৯৮৭ সালের এই দিনে যুবলীগ নেতা নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটিকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারাও বাণী দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা জানাবেন দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। ইতোমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নূর হোসেন বুকের রক্ত দিয়েছেন: রাষ্ট্রপতি
‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১০ নভেম্বর এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সাহসী সৈনিক নূর হোসেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ এই স্লোগান শরীরে ধারণ করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সেদিন প্রতিবাদের পুরোভাগে থাকা শহীদ নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। আমি শহীদ নূর হোসেন দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি নূর হোসেনসহ গণতন্ত্রের জন্য আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদকে।’
নূর হোসেন আমার গাড়ির সাথে সাথে হাঁটছিল:প্রধানমন্ত্রী
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বাণীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এ দিবসে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি নূর হোসেনসহ গণতন্ত্রের জন্য আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদকে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ১০ নভেম্বর একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিন যুবলীগ নেতা নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেন তার বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে ১৯৮৭ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিল।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, নূর হোসেন আমার গাড়ির সাথে সাথে হাঁটছিল, মিছিলটি যখন জিরো পয়েন্টে পৌঁছে তখন স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিল লক্ষ্য করে প্রথমে বোমা মারে, এর পরই গুলি করে, সে গুলিতে নূর হোসেন ও বাবুল শহীদ হয়। ফাত্তাহ তৎকালীন বিডিআর-এর গুলিতে গ্রিন রোডে মৃত্যুবরণ করে।’
তিনি বলেন, ‘যুবলীগের আরেক নেতা নূরুল হুদা ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো শহীদ হন। তাদের এ মহান আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনকে বেগবান করে। সর্বস্তরের মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়।’
নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা রাজনৈতিক দলগুলোর
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া প্রমুখ।
বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে গিয়ে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরশাসকের তপ্ত বুলেটের শিকার হয়েছিলেন নুর হোসেন। সেদিন তার আত্মত্যাগ এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল। নূর হোসেনের আত্মদানের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে সংঘটিত হয়েছিল সফল ছাত্র গণঅভ্যুত্থান। পতন হয়েছিল নির্দয় স্বৈরশাসকের, মুক্ত হয়েছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র। আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে শহীদ নূর হোসেন আমাদের প্রেরণা। তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
শহীদ নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, ১০ নভেম্বর ১৯৮৭। দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে জীবন্ত এক পোস্টার। বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ শ্লোগান নিয়ে বিক্ষোভে শামিল এক যুবক-নূর হোসেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৃহস্পতিবার সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। এরপর পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র সমাবেশে যোগ দেবেন মঞ্চের নেতারা।
সাকি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নূর হোসেন চত্বরে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণসংহতি আন্দোলন পুষ্পস্তবক অর্পণ ও র্যালির আয়োজন করেছে।
এছাড়া, জাতীয় পার্টি দিবসটিকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করে। দলটির নেতারা এ উপলক্ষে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবেন।