হংকংকে বিপর্যস্ত করে সুপার ফোরে ভারতের মোকাবিলা করেছিল পাকিস্তান ।আজ ৭ই সেপ্টেম্বর, বুধবার, দুবাইতে, এশিয়া কাপ ২০২২-এর সুপার ৪ রাউন্ডের চতুর্থ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের দেয়া ১৩০ রানের লক্ষ্য তারা করতে নেমে ১ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় বাবর আজমরা।
ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ম্যাচের সাক্ষী হলো শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ ওভারে টানা ২ ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন লোয়ার অর্ডারের ব্যাটার নাসিম শাহ।
সুপার ফোরের ম্যাচে আজ (বুধবার) ১ উইকেটের নাটকীয় জয়ে ফাইনালে নাম লিখিয়েছে পাকিস্তান। এতে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে আফগানিস্তান আর ভারতের। পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা খেলবে ফাইনালে।
টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ১৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ৫ উইকেটে ১০৫। জয়ের জন্য তখন দরকার ১৮ বলে ২৫। হাতে যথেষ্ট উইকেট থাকায় পাকিস্তানের পক্ষেই ছিল ম্যাচটি।
কিন্তু এরপরই ঘটে নাটকীয়তা। ১৮তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে মোহাম্মদ নওয়াজ (৪) আর খুশদিল শাহকে (১) তুলে নেন আফগান পেসার ফজলহক ফারুকি।
পরের ওভারে আসিফ আলির ছক্কায় ১০ রান তুললেও আরও দুই উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। ফরিদ আহমেদের ওই ওভারে হারিস রউফ ০ আর আসিফ ৮ বলে ১৬ করে শর্ট ফাইন ক্যাচ হলে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে পাকিস্তান।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১। কিন্তু হাতে মাত্র ১ উইকেটে, তার চেয়েও বড় কথা ছিলেন না কোনো স্বীকৃত ব্যাটার। লোয়ার অর্ডারে নাসিম শাহ আর মোহাম্মদ হাসনাইন মিলে ম্যাচটি জেতাতে পারবেন? নিশ্চয়ই বিশ্বাস হয়নি খোদ তাদেরও।
তবে নাসিম শাহ অসাধ্য সাধন করলেন। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলেই দুই ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন এই লোয়ার অর্ডার।
লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৩০ রান। তবে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। দলীয় ১৮ রানের মধ্যে সাজঘরে ফিরে যান বাবর আজম আর ফাখর জামান।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাবরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ফজলহক ফারুকি। আফগান পেসারের বলে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সুবিধা করতে না পারা পাকিস্তান অধিনায়ক।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে ননস্ট্রাইকে রানআউট হন ফাখর জামান (৯ বলে ৫)। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদ ৩৩ বলে ২৭ রানের ধীরগতির এক জুটি গড়েন।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে রিজওয়ানকে (২৬ বলে ২০) এলবিডব্লিউ করে জুটিটি ভাঙেন রশিদ খান। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। সেখান থেকে আফগানদের চমকে দিয়ে শাদাব খানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান।
শাদাব প্রমোশন পেয়ে খেলার গতি বাড়ান। ২ ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে অনেকটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেন তিনি। কিন্তু ইফতিখার খেলছিলেন একদম বেশি সতর্কতার সঙ্গে। ৩৩ বলে ৩০ রান করে ফরিদ আহমেদের শিকার হন ডানহাতি এই ব্যাটার। ভাঙে ৪১ বলে ৪২ রানের জুটি।
পাকিস্তানের তখন ২৭ বলে দরকার ৪৩। আফগান বোলাররা চাঙা হয়ে উঠেন। মারমুখী খেলছিলেন শাদাব খান। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে রশিদ খানকে ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু পরের বলে আবারও মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ হন শাদাব (২৬ বলে ৩৬)।
বড় চাপে পড়ে পাকিস্তান। তবে শেষ পর্যন্ত সব চাপ আর শঙ্কা পেছনে ফেলে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়েছে দলটি।
এর আগে পাকিস্তানি বোলারদের তোপে ৬ উইকেটে ১২৯ রানেই থেমে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। শারজায় এশিয়া কাপের মহাগুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে টস জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম।
এরপরই রানের গতি কমে যায় আফগানিস্তানের। পাকিস্তানি বোলাররা রীতিমত চেপে ধরেন। প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নেমেছিলেন করিম জানাত। কিন্তু ঠিক টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটা করতে পারেননি। ১৯ বল খেলে মাত্র ১৫ রান করে মোহাম্মদ নওয়াজকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন জানাত।
১৪তম ওভারে শাদাব খানকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। তবে পরিণতি ভালো হয়নি। ওই ওভারেরই শেষ বলে আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে ধরা পড়েন নাজিবুল্লাহ (১১ বলে ১০)।
পরের ওভারের প্রথম বলে আরও এক উইকেট হারায় আফগানরা। নাসিম শাহর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ইনসাইডেজ হয়ে স্টাম্প হারান অধিনায়ক মোহাম্মদ নাবি, ফেরেন গোল্ডেন ডাকে। ৯১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আফগানিস্তান।
ইব্রাহিম জাদরান ধীরগতিতে খেলছিলেন। ১৭তম ওভারে তাকে তুলে নেন হারিস রউফ। পাকিস্তানি পেসারের গতিময় এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন ইব্রাহিম (৩৭ বলে ৩৫)।
শেষদিকে রশিদ খানের ১৫ বলে ১৮ আর ওমরজাইয়ের ১০ বলে ১০ রানের ইনিংসে ১২৯ পর্যন্ত গেছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন হারিস রউফ। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন এই পেসার। আরেক পেসার নাসিম শাহ ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রানে নেন একটি উইকেট।