বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে ধনী পশ্চিমা দেশগুলোতে বাড়ছে এ রোগ। ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত ৫১ জনের শরীরে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া কানাডায় ৭৭ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ২১ জনের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।
জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই রোগী পাওয়া গেছে।
ফ্রান্সে গত মাসে প্রথম মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হয়। গত বুধবার দেশটিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩। গতকাল তা বেড়ে ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্সের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের সবাই পুরুষ। তাঁদের বয়স ২২ থেকে ৬৩ বছরের মধ্যে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু একজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত সাত শর বেশি মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অনেকটা গুটিবসন্তের মতো হলেও মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ মৃদু। শুরুতে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি দেখা দেয়। ফুলে যেতে পারে লসিকা গ্রন্থি। এক থেকে তিন দিনের মধ্যে সারা গায়ে ফুসকুড়ি ওঠে। মুখে শুরু হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই ফুসকুড়ি। বসন্তের মতোই প্রথমে লাল, তারপর ভেতরে জলপূর্ণ দানা, শেষে শুকিয়ে পড়ে যেতে থাকে। দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এই রোগ। তারপর নিজে নিজেই সেরে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তেমন বড় কোনো জটিলতা হয় না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হাজারো রোগী শনাক্ত হলেও ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় এত দিন রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।
ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রিজিট বোরগুইগনন বলেছেন, এটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ফ্রান্সে পর্যাপ্ত টিকার মজুত রয়েছে।
ফ্রান্স সব প্রাপ্তবয়স্কের টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও টিকা নিতে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি গতকাল জানিয়েছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২১ জনের শরীরে মাঙ্কিপক্স ধরা পড়েছে। তারা বলছে, সেখানে এ রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
সিডিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হওয়া প্রথম ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনই পুরুষ। এই ২১ জনের মধ্যে ১৪ জন একসঙ্গে ভ্রমণ করেছেন। যদিও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই এখন সুস্থ বা সুস্থ হওয়ার পথে এবং কারও শরীরেই মারাত্মক জটিলতা দেখা যায়নি।
কানাডাও গত শুক্রবার মাঙ্কিপক্সের নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের শরীরে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই কুইবেক অঙ্গরাজ্যের। ইতিমধ্যে সেখানে টিকা সরবরাহ করা হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ইউরোপজুড়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্তের কথা নিশ্চিত করেছে স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন। অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডও মাঙ্কিপক্স শনাক্তের কথা জানিয়েছে।
ইউকে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস জানায়, মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত বেশির ভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন। তবে মাঙ্কিপক্স তেমন গুরুতর না হলেও হঠাৎ রোগটির প্রাদুর্ভাব বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন করেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন। উচ্চঝুঁকিতে থাকা সংক্রমিত ব্যক্তিদের তিন সপ্তাহ সঙ্গনিরোধে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।