গ্রামীণ টেলিকমের তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্যের অনিয়ম অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের কোন চার সদস্যের অনিয়ম খতিয়ে দেখছে তেমন কোনো তথ্য দেননি দুদক সচিব।
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগসংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখান ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে, সেখানে অভিযুক্তদের তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম রয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের অনিয়ম অনুসন্ধানে নাম আসা অভিযুক্তদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করবে কি না জানতে চাইলে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘অনুসন্ধানের জন্য বিধি-বিধান অনুযায়ী অনুসন্ধান করবে দুদক। প্রয়োজন মনে করলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে।’ শিগগিরই তাদের কাছে বিভিন্ন নথি চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের চার অভিযোগ অনুসন্ধান করবে বলে জানান মাহবুব হোসেন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পরস্পর যোগশাজশে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মাসাৎ করেন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হলো, তাদের শেয়ার থাকা গ্রামীণফোনের ‘গ্রামীণফোন ওয়ার্কার্স প্রফিট ফান্ড অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফান্ড’-এর অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেন তারা।
এর আগে ২০১৫ সালে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের পাঁচ কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৩০০ শ্রমিক ও কর্মচারীর ৭০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন। পরে এই মামলা শুনানি শেষে মহানগর হাকিম ইউসুফ হোসেন এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
দুদকের আসা অভিযোগ থেকে জানা যায়, সরকারের নির্দেশনা মেনে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রামীণফোন ওয়ার্কার্স প্রফিট ফান্ড অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফান্ডে লাভের ৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালে গ্রামীণফোনের পরিচালক সভায় তা পাস হলেও শ্রমিকদের লভ্যাংশের ৬৯১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীরা আজও এর ক্ষতিপূরণ বুঝে পাননি।
জানা যায়, সে সময় শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যদের করা মামলায় গ্রামীণফোন লিমেটেড, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও, গ্রামীণফোন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে আসামি করা হয় বলে জানান গ্রামীণফোন লিমিটেডের পরিবহন শ্রমিক মেহেদী হাসান।