বেলা একটা। রাজধানীর মুগদার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে টিকাগ্রহীতারা। এক পাশে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে পুরুষ, আরেক পাশে নারীরা।
দুটিতেই গাদাগাদি অবস্থা। প্রতিবার একেক সারি থেকে পাঁচ থেকে সাতজন করে কেন্দ্রে ঢোকানো হচ্ছে। টিকা নেওয়ার পর নারী ও পুরুষেরা যে যার মতো চলে যাচ্ছেন। কাউকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়নি। টিকা নিতে আসা মানুষের চাপ থাকলেও সুশৃঙ্খলভাবেই টিকা নিয়েছেন লোকজন।
আজ শনিবার করোনাভাইরাসের গণটিকা কার্যক্রমের বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) দেওয়ার প্রথম দিন ছিল। এদিন খিলগাঁওয়ের টিকাকেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা মানুষের চাপ ছিল। যাঁরা টিকা নিতে এসেছেন, তাঁদের কারও ভাষ্য, ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত তারিখে টিকা নেওয়া হয়নি বা মুঠোফোনে টিকার খুদে বার্তা আসেনি বলে তাঁরা সময়মতো টিকা নেননি।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দুটি টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভিড় থাকলেও খুব বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। টিকা কার্ড সঙ্গে থাকলেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি মুঠোফোনে খুদে বার্তা না এলেও করোনার বুস্টার ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে যাঁদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর চার মাস পেরিয়েছে, কেবল তাঁরা টিকা নিতে পারছেন।
টিকা প্রদানকারী কর্মীরা জানান, আজ সকাল নয়টা থেকে শুরু হয়েছে বুস্টার টিকাদান কার্যক্রম। শেষ হয় বিকেল চারটায়। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে চলে দৈনিক টিকাদান কার্যক্রমও। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ হচ্ছেন মধ্যবয়সী ও বয়োজ্যেষ্ঠ।
দুপুরে মুগদা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা নিতে আসেন ৬৭ বছর বয়সী রেজাউল করিম। টিকাকেন্দ্রে এসে তিনি টিকা নিলেন আধা ঘণ্টার মধ্যেই। মানিকনগর এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘প্রথম দুই ডোজ সিনোফার্মের টিকা নিয়েছি। আজ বুস্টার হিসেবে মডার্নার টিকা দেওয়া হলো। তিন ডোজে সুরক্ষা বেশি বলে টিকা নিলাম। টিকা নিতে অবশ্য খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয়নি।’
মুগদা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে পরিচালনা করছে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার। এই কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জাকেরা হান্নান রুবায়েত প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর ১২টার মধ্যে ৫০০ জনকে করোনার বুস্টার ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি আছে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় নগর মাতৃসদন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটির আশপাশে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় লক্ষণীয়। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা দুটি সারি। স্বেচ্ছাসেবকেরা সারির ব্যবস্থাপনায় আছেন। একেক করে বুথে নিয়ে গিয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকা প্রদানকারী কর্মীরা জানান, এই কেন্দ্রে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন করে করোনার টিকা দেওয়া হয়। আজ শনিবার বুস্টার সপ্তাহের প্রথম দিনে ৪৬৮ জনকে করোনার বুস্টার ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে।। এর মধ্যে নারী ২৫২ জন। অন্যান্য দিনের তুলনায় বুস্টার ডোজ নিতে আসা মানুষের একটু চাপ ছিল।
এই টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন ফিল্ড সুপারভাইজার মরিয়ম বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যান্য দিনে বুস্টার ডোজ নিতে আসেন ২০০ থেকে ২৫০ জন। আজ বিকেল চারটার দিকে প্রায় ১৫ জনকে ফেরত পাঠাতে হয়েছে টিকা শেষ বলে। এই কেন্দ্রে যত টিকা বরাদ্দ এসেছে, তা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বাকি ছিলেন, তাঁদের আগামীকাল টিকা দেওয়া হবে।’
গত ২৮ মে মুঠোফোনে বার্তা আসে মো. নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির। তিনি আজ সকালে তিলপাপাড়ার নগর মাতৃসদন থেকে টিকা নেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে টিকা দিতে সেদিন আমি নিজেই আসতে পারিনি। খবরে দেখলাম, আজ থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এ কারণে নিতে এসেছি।’