গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এই বৈঠকটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ ২০০৮ সাল থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপির এখনকার শীর্ষ নেতা তারেক জিয়া। লন্ডনে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দল পরিচালনা করছেন, বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। এটি নিয়ে ব্রিটিশ সরকার এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে বলেও জানা গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত তারেক জিয়াকে যেন বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়- এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেনদরবার করা হচ্ছে।
আর এই কারণেই ব্রিটিশ সরকার এখন তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারণ ব্রিটেন তার নিজের দেশের ভূখণ্ড অন্যদেশে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস বা নাশকতার সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতে দেয় না। এটি ব্রিটেনের ঐতিহ্যগত রীতি।
সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে তাতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে তিনি ব্রিটেনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র এবং অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির তিন নেতাকে ডেকে সারা কুক কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন এবং তারেকের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অবশ্য বিএনপির তিন নেতা তারেকের ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। তারা বিষয়টি নিয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলে আবার সারা কুককে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে যে, বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন দরকার। যারা দেশে থেকে রাজনীতি করছেন, দলে সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন, তাদেরকেই নেতৃত্বে রাখা উচিত।
পশ্চিমা দেশগুলো এই মুহূর্তে তারেক জিয়াকে বিএনপির কার্যকর নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এই মনোভাবটি পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আরও প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু তারেক জিয়া এখন ব্রিটেনেই অবস্থান করছেন, কাজেই সারা কুক এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
তারেক জিয়ার ব্রিটেনে অবস্থান এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ ব্রিটিশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একধরনের অস্বস্তি এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে বলেও যুক্তরাজ্য মনে করেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে আলাপকালেও তারেককে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
আর একারণেই ব্রিটেন মনে করে যে, তারেক জিয়া যদি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার জীবন রক্ষার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তাহলে উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ব্রিটেন সেটা বিবেচনা করতেই পারে। কিন্তু ব্রিটেনে বসে যদি তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন, তবে সেটি অনভিপ্রেত।
তবে বিএনপির তিন নেতা বলেছেন যে, বিএনপি কাছে সারা কুক জানতে চেয়েছেন যে, তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা কি? তাদের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করার পর তারা কি করলো ইত্যাদি।
তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই ব্রিটিশ দূতাবাসে প্রধান আলোচনা হয়েছে।