জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জামায়াত আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিবে সেটা মিথ্যাচার হোক, গুজব হোক, সহিংসতা হোক, হত্যা ক্যূ ইত্যাদি যাই হোক। কিন্তু আমি সেটাকে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে আমি আক্রমণ থেকে বাঁচি। একই সঙ্গে যখন একটি সংকট তৈরি হয় সেখানে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে যে, নিজেদের ভেতর কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা, কোন গাফিলতি বা ব্যর্থতা আছে কিনা অথবা বাড়তি কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ হয়েছে কিনা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আমার মনে হয় আমি শক্রকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি যতটুকু হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি জটিল হয়েছে আমাদের নিজেদের কারণে। সেটাও আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে হবে। সেখানে যদি গাফিলতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি, অপ্রয়োজনীয় বা বাড়তি কোন কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে অথবা কোন ব্যক্তি বা চক্র কাজ করে থাকে সেটাকে চিহ্নিত করে সেটাকে ছেঁটে ফেলা দরকার। এটাকে আমি বলবো অভ্যন্তরীণ সংস্কার। সে হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি গত ১৫ থেকে ২০ দিনে তৈরি হয়েছে সেখানে আমি মনে করি মন্ত্রিপরিষদ থেকে উপজেলা পর্যন্ত প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং সরকার সবকিছুরই একটা বিশ্লেষণ করা দরকার।
তিনি বলেন, কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে একজন জেনারেলের যদি ত্রুটি পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে জেনারেলকে পরিবর্তন করে ফেলা হয়। পরিবর্তন করলে বদনাম হয় না বরং সেখানে অযোগ্য লোককে বাদ দিয়ে যোগ্য লোককে বসানো হয়। আমাদের সমস্যা হলো পরিবর্তনের পরামর্শ দিলে দোষ পড়ে পরামর্শের ওপর। আমি ২০০ জন লোককে নিয়োগ দিয়েছি কিন্তু মাঠে গিয়ে কেউ কেউ ফেল করলো। আর যদি কেউ ফেল করে তাকে বদলাতে হবে। তাকে টিকিয়ে রাখা দরকার নেই। না বদলালে বরং আমার ক্ষতি হবে।
জাসদ সভাপতি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন সামাল দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার ছিল এবং এটা রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু আমলা দিয়ে আমি কেন করবো। আমি রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করবো। কিন্তু সেখানে কালক্ষেপন হলো। আমার যখন কোন বিরোধী নাই, আমি যখন সংস্কার করতে চাচ্ছি তখন সেটা তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং কালক্ষেপনের ঘটনা, রাজনৈতিক বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিনিধি দিয়ে নিষ্পত্তি না করার ঘটনা, মন্ত্রিপরিষদের অতিকথন, আক্রমণাত্মক ভঙ্গি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা সবকিছুই জনগণকে বিক্ষুব্ধ করেছে। এমনকি পুলিশের আইজিপির বক্তব্যও সঠিক ছিলো না। তিনি এভাবে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলবে কেন। সবকিছু মিলিয়ে বহু জায়গায় বহু রকম ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গুলিবর্ষণের প্রয়োজন আদৌ ছিলো কিনা-এমন প্রশ্ন রেখেহাসানুল হক ইনু বলেন, রংপুরে আবু সাঈদকে যেভাবে গুলি করা হয়েছে সেটা পুলিশের জন্য একটি বিশাল কালো দাগ হয়ে থাকবে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আবু সাঈদ হাত তুলে লাফাচ্ছে আর তাকে গুলি করেই যাচ্ছে। সেটা রাবার বুলেট দিয়েই করি আর পাথর দিয়েই করি না কেন। এখানে কোন অজুহাত দিয়ে লাভ নাই। সে শিবির না অন্যকিছু সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো খালি হাতে একটা ছেলে একলা একলা লাফাচ্ছে আর পুলিশ তাকে গুলি করছে। আত্মরক্ষার জন্য তাকে তো যেতে দিতে হবে। দাবা খেলাতে রাজাকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে হাতি ঘোড়া বিসর্জন দিতে হয়। রাজা মানে আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাষ্ট্র, শেখ হাসিনা এবং সংবিধান। এই রাজাকে রক্ষা করতে, এই আক্রমণ থেকে বাঁচতে বা নিজের ঘর সামলাতে রাজাকে রক্ষায় আমি হাতি ঘোড়াকে বিসর্জন দিতে রাজি আছি।
-হাসানুল হক ইনুর একান্ত সাক্ষাৎকার বাংলা ইনসাইডারের সাথে।