কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে রীতিমতো তাণ্ডব হয়েছে। এই তাণ্ডবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির সারা দেশে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে। এই ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের কাউকে কাউকে মাঠে দেখা গেছে, তারা রীতিমত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কাছে মার খেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে রীতিমতো বের করে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ছাত্রলীগ কার্যত কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি।
দেখা গেছে ছাত্রলীগের কিছু ত্যাগী পরীক্ষিত নেতারাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের হঠকারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পেরেছিল এবং তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে যারা বিভিন্ন রকম পদ গ্রহণ করেছে, সুবিধা নিয়েছে তাদেরকে দেখা গেছে নীরব, নিথর। তারা গা ঢাকা দিয়েছে অথবা অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
শুধু ছাত্রলীগ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক প্যানেলকে রহস্যময় ভূমিকায় দেখা গেছে। গতকাল যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের কাউকে কাউকে কোটা আন্দোলনের সমর্থনকারীদেরকে উস্কানি দিতে দেখা গেছে। অনেকে নিরাপদ দূরত্বে নিজেদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে অবস্থানে রেখেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সত্যিকারের আদর্শবাদীদেরকে নেওয়া হয়নি, গতকালের সংকটে তা প্রমাণিত হয়েছে। বরং যারা সুবিধাবাদী এবং অনুপ্রবেশকারী ছিল তারা এখন নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর এবং দক্ষিণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলা হচ্ছিল। এই দুটি সংগঠন যে একেবারে মৃতপ্রায় এবং তাদের যে কর্মী সমর্থক জোগাড় করার ন্যূনতম যোগ্যতাটুকু নেই, গতকালের ঘটনায় তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কমিটি বাণিজ্য, টাকার বিনিময়ে কমিটির পদ দেওয়া ইত্যাদির কারণে ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে৷ গতকালের সংকটে আওয়ামী লীগের কাউকেই মাঠে দেখা যায়নি। বরং তারা যার যার মতো করে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করেছে।
একটা সময় ঢাকা মহানগর যুবলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকত। বিশেষ করে সম্রাট একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কিন্তু সম্রাট এখন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ক্যাসিনো কাণ্ডের ঘটনার পর দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন এই ত্যাগী নেতা। এখন তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে মোটামুটি গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে ঢাকা শহরে যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান নেই বললেই চলে। গতকালের ঘটনায় তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। যুবলীগের যে সমস্ত কমিটি গঠিত হয়েছে সেই সমস্ত কমিটিগুলো সবই মতলবী সুবিধাবাদী এবং হাইব্রিড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যারা টাকার বিনিময়ে কমিটিতে ঢুকেছে এবং তাদের প্রধান লক্ষ্য ঠিকাদারি ব্যবসা এবং অন্যান্য অপকর্মের মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছানো। আর এ কারণে গতকাল তাদেরকে দেখা যায়নি।
সরকারের মধ্যেও যে সমস্ত হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারী মন্ত্রী অবস্থান গ্রহণ করেছে, দিনের পর দিন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদেরকেও এই ঘটনা থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগের কোনো সংকটেই সুবিধাবাদী হাইব্রিডরা থাকেন না। কিন্তু সুসময়ে এরাই চারপাশ ঘিরে সমস্ত মধু খায়, সব সুবিধা আদায় করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সেই ঘটনাটি আরেকবার প্রমাণিত হল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত হাইব্রিড নেতারা কথা বলছিলেন তারাও এখন নিষ্প্রাণ, নিথর। শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ড. হাছান মাহমুদ এবং মাঠের রাজনীতি করা নেতাদেরকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যাপারে সরব দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী যারা গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তারা এখন নীরব এবং সবকিছু থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আর এ নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।