বিদেশে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় পিনাকী ভট্টাচার্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় পিনাকীর সঙ্গে মফিজুর রহমান ও মুশফিকুল ফজল আনসারী নামের অপর দুজনকে আসামি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মফিজুর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। আর মুশফিকুল ফজল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। চারদলীয় জোট সরকার আমলে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপ প্রেস সচিব ছিলেন তিনি। মুশফিকুল ফজল বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রদের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে থাকেন।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পিনাকী ভট্টাচার্য ফ্রান্সে অবস্থান করে সরকারবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। তাঁর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পেলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
মামলায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট গত ১৪ অক্টোবর নজরে আসে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের। ওই পোস্টে পুলিশ সদস্যদের সম্পর্কে বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে ১৫ অক্টোবর পল্লবীর বাসা থেকে মফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশ মফিজুরের দুটি মুঠোফোন জব্দ করে।
সিটিটিসির সিটি ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগের উপপরিদর্শক কে এম আবদুল্লাহ হিল মারুফ মামলায় অভিযোগ করেন, আসামি মফিজুর রহমান তাঁর ভুয়া ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই তালিকায় আছেন পিনাকী ভট্টাচার্য ও মুশফিকুল ফজল আনসারী। মিরপুরে পুলিশ বাহিনীর একটি অভিযানের ঘটনাকে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়। সেই তথ্য ও ছবি পাঠানো হয় পিনাকী ভট্টাচার্যের ফেসবুক মেসেঞ্জারে। আলামত হিসেবে নাগরিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকার অনলাইনের একটি করে প্রতিবেদন এবং মুশফিকুল ফজল আনসারীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে পিনাকী ভট্টাচার্যের কাছে পাঠানো কয়েকটি ছবি ও কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। সেখানকার আলাপচারিতায় মুশফিকুলকে পিনাকীর কাছে বইয়ের তালিকা চাইতে দেখা গেছে।
এই মামলার আসামি মফিজুর রহমানকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিটিটিসি। মামলায় বলা হয়, মফিজুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচার করেছেন। পরে সেই তথ্য তিনি বিদেশে অবস্থানরত পিনাকী ভট্টাচার্য, মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছেন। পরে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। মফিজুর রহমানসহ অন্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রাহাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার মফিজুরের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে। তিনি পিনাকী ছাড়া আর কার কার কাছে ভুয়া তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, মফিজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর খুদুখখালী গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার মতিঝিল থানায় দুটি মামলা রয়েছে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করা পিনাকী ভট্টাচার্য একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। পিনাকী ভট্টাচার্য নানা বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে থাকেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য বিদেশে অবস্থান করে সরকার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পিনাকীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম।
খবর: প্রথম আলো