Close

প্রবাসে দেশবিরোধী ভয়ানক তিন দুর্বৃত্ত

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া তিন ব্যক্তি। এরা হচ্ছেন দেশবিরোধী ও দিগভ্রান্ত সাংবাদিক কথিত বুদ্ধিজীবী আবু রেজা আহমেদ ফয়সল চৌধুরী সুয়েব, স্বঘোষিত ‘অজ্ঞেয়বাদী’ পিনাকী ভট্টাচার্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত ভ্রান্ত বিশ্লেষক তাজ হাশমী।

তাদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করে গোয়েন্দা সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে অবস্থান করা এ তিন ব্যক্তিরই মস্তিষ্ক বিকৃত। এরা পাগল শ্রেণির লোকের পর্যায়ে পড়েন।

কুরুচিপূর্ণ গুজব ছড়ানো, মিথ্যাচার করা এদের পেশা ও নেশা। এরা বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারে লিপ্ত।

নিজেদের এরা এতটাই পন্ডিত মনে করেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু পরিবার, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা রাজনৈতিক দলের সমালোচনাই নয়, এরা সনাতন হিন্দু ধর্ম থেকে শুরু করে ইসলাম ধর্ম, কোরআন, আল্লাহ-খোদা কোনো কিছুরই সমালোচনা বাদ দিচ্ছেন না। তবে সব ছাড়িয়ে একটি জায়গায় তাদের মধ্যে দারুণ মিল, তা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া ও দেশে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটানো।
এদের বিষয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এরা জানেন অনলাইনে প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে বিদেশে বসে মিথ্যাচার করলে কিছু হয় না। তাই এরা যা মনে আসছে তা-ই বলছেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করা, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা, যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি এবং জঙ্গিবাদের পক্ষে জনসর্থন আদায় করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এদের কেউ কেউ আইএস এবং হিযবুত তাহরীরের সঙ্গেও সম্পৃক্ত বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পেইড এজেন্ট বলেও এদের কাউকে কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

রেজা আহমেদ ফয়সল চৌধুরী সুয়েব
দেশবিরোধী সাইবার অপরাধীর তালিকায় আছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাঠলী ইউনিয়নের পাঠলী গ্রামের বাসিন্দা রেজা আহমেদ ফয়সল চৌধুরী ওরফে সুয়েব। তিনি একসময় চ্যালেন আইয়ের লন্ডনে অবস্থিত ইউরোপ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে চ্যানেল আই থেকে বাদ পড়ার পর এখনো সে পরিচয়ই বেচে খান। দেশে থাকার সময় বিয়ানীবাজারের ডা. আনোয়ারা আলী নামে একজন নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেন তিনি। পরে লন্ডনে গিয়ে নিজ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে বিয়ে করে বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন। ব্যক্তিগতভাবে বিশৃঙ্খল স্বভাব ও স্ত্রীকে নির্যাতন করায় দ্বিতীয় স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। নারী কেলেঙ্করির এই হোতার এখন স্থায়ী বসবাস যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন সুয়েব। তিনি বর্তমানে ‘চ্যানেল ইউরোপ’ নামে একটি ভুঁইফোড় ফেসবুক পেজ চালান। তার কাজ মূলত বাংলাদেশ সরকার, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া।

চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তাকে চ্যানেল আই ইউরোপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যানেল আইয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় চ্যালেন আইয়ের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’

চাকরি হারানোর পর আর্থিক সংকটে অস্থির সুয়েব সেলিব্রেটি হওয়ার আশায় বর্তমানে নিজে একটি ফেসবুক পেজ খুলে বসেছেন এবং সেখানে ‘স্ট্রেইট ডায়ালগ’ নামে একটি অনলাইন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। প্রায়ই নিজে নিজে লাইভে এসে বকবক করেন এই বাচাল। ভিউয়ার না থাকলেও সেগুলো ইউটিউব-ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন লাইক-কমেন্ট পাওয়ার আশায়। এ ছাড়া তিনি কানাডার ভুঁইফোড় ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ নাগরিক টিভির নিয়মিত বিশ্লেষক। সরকার, প্রধানমন্ত্রী, শিল্পপতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও গুজব ছড়ানোই কথিত সাংবাদিক সুয়েবের মূল কাজ। তিনি মিথ্যাচার করে চলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, এস আলম গ্রুপ, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস শরাফতসহ বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে ইচ্ছামাফিক বিষোদগার করে যাচ্ছেন এই স্বঘোষিত পন্ডিত।

সুয়েব কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদে নির্বাচন করে হাস্যকর সংখ্যায় ভোট পেয়ে পরাজিত হন। এর আগে তার প্রথম স্ত্রী ডা. আনোয়ারা আলী মেয়র পদে নির্বাচন করেন। সুয়েবের ‘স্ট্রেইট ডায়ালগ’ নামক অনষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নেন বিতর্কিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন, এম রহমান মাসুম, টিটো রহমান, নাজমুস সাকিবসহ চিহ্নিত সাইবার অপরাধীরা।

সুয়েব সম্পর্কে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, ‘সুয়েব একটা টাউট ও বাজে লোক। তার কাছে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান কেউ ভালো নন। মনে হয় বিশ্বে একমাত্র তিনিই সৎ মানুষ আর সব খারাপ। অথচ অর্থ আত্মসাতের দায়ে চ্যানেল আই ইউরোপের দায়িত্ব থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি বিশাল সংবাদ-বিশ্লেষক। সব বিষয়ে পান্ডিত্য দেখান। ’

সুয়েবকে ‘পাগল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুয়েবের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। তিনি না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ, না বামপন্থি। কখন কী বলেন আর কী করেন তা তিনি নিজেও জানেন না। ফেসবুক-ইউটিউবে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে এবং লাইক-শেয়ার ও কমেন্ট পাওয়ার আশায় প্রতিনিয়ত পাগলের প্রলাপ বকে যান। এদের আসলে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। এদের পাত্তা দেওয়া মানে জাতে তুলে দেওয়া। চ্যানেল আইয়ের ইউরোপ অফিসে সুয়েব কাজ করতেন ছোট্ট একটি কক্ষে। সেখানে টক শোর নামে বিভিন্নজনকে ডেকে নিয়ে অর্থ আদায় ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতেন সুয়েব। এখন তা-ও না থাকায় পাগলের মতো নিজেই লাইভে এসে বকবক করেন। ’

পিনাকী ভট্টাচার্য
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রয়াত শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভট্টাচার্যের বড় ছেলে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য। মায়ের নাম সুপ্রীতি ভট্টাচার্য। তার ভাই অপূর্ব ভট্টাচার্য ঢাকায় থাকেন এবং বোন বুলবুল ভট্টাচার্য থাকেন বগুড়ায়। পিনাকী সনাতন ধর্ম, দেশের প্রচলিত রাজনীতি, ধর্মীয় সম্প্র্রীতির বিপক্ষে কথা বলায় বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া এই ব্যক্তি ২০২০ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান। যাওয়ার আগে তিনি নিজেই গুম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়ান। পিনাকী ভট্টাচার্য ধর্মীয় উসকানি ছড়াতে ইউটিউবে তার নিজ চ্যানেলে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিধান নিয়ে কট্টর সমালোচনা করেন। গো-হত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিদ্রুপকারী এই পিনাকী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি আইনের সমালোচনার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে বিদ্রুপ করে আদালত অবমাননা করে চলেছেন। পিনাকী ভট্টাচার্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদযাপন বর্জনের ডাক দিয়েছেন।

পিনাকী ২০১৮ সালে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বন্দুকযুদ্ধকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে মাদক কারবারিদের সমর্থন জোগান। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে গুজব ছড়িয়ে স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের উসকানি দিয়ে তাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে তলব করে। এর পরই তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যান। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি অবস্থায় তিনি গোপনে সীমান্ত পার হয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকক যান এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে ফ্রান্সে পালিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। বর্তমানে ফ্রান্সে বসে তিনি ধর্ম, দেশের কৃষ্টি-কালচার, সরকার, সেনাবাহিনী, বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের মতো বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছেন।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের লেখা ‘ভগবানের সহিত কথোপকথন’ সিরিজে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়েও রসিকতা করেন পিনাকী। এ ছাড়া ব্লগার আসিফকে কোপানো ও অভিজিৎ রায়কে হত্যার পক্ষে কথিত যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।

মুক্তমনা ব্লগে পিনাকী ভট্টাচার্যকে নিয়ে একজন ব্লগার লেখেন, ‘পিনাকী ভট্টাচার্য, আপনি যে কোনো বৈধ রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী হতেই পারেন। সেটি আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটি নিয়ে আমার কোনো ধরনের বক্তব্য নেই। আপনি দ্বিমুখী চরিত্র এ কারণে, আপনি জন্মসূত্রে হিন্দু, নিজেই বলেন আপনি একজন অজ্ঞেয়বাদী (অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে একটি মতবাদ অথবা কতিপয় যুক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি ধারণা, এটি কোনো ধর্ম নয়, যদিও এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না আবার স্বীকারও করে না)। আপনি ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেননি, কিন্তু দাড়ি রাখেন, টুপি ও পাঞ্জাবি পরেন, মাদরাসা শিক্ষা যে খুবই উঁচু মানের শিক্ষা তা প্রমাণ করতে রাজা রামমোহন রায়ের উদাহরণ টানেন। কিন্তু নিজের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয় কাউকে মাদরাসায় পড়ান না, ইসলামিক শিক্ষা এত ভালো হওয়া সত্ত্বেও আপনি নিজে ও আপনার পরিবারের কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। তারা কেউ আলোর পথে আসেননি। এই দিকে বিবাহ নামক ধর্মীয় আচার না মেনে ওপেন রিলেশনশিপে আছেন, যেটা অবশ্য একজন অজ্ঞেয়বাদী হিসেবে আপনি করতেই পারেন, কিন্তু সেই আপনি ইসলামিক রীতির প্রশংসা করেন অথচ নিজের জীবনে তার কোনো প্রয়োগ নেই!’

উইমেন চ্যাপ্টার নামে একটি ওয়েবসাইটে লেখক শেখ তাসলিমা মুন লিখেছেন, ‘পিনাকী বুঝতে পেরেছেন এ অঞ্চলে মৌলবাদই একটি উদীয়মান শক্তি। যে সরকারই আসুক এদের পায়ে তেল মর্দন ছাড়া কারও পক্ষে ক্ষমতা পোক্ত করা সম্ভব নয়। তারাই মূল শক্তি। তাই পিনাকী অ্যানালাইসিস করে দেখেছেন, তার ক্ষমতা ও শক্তি বাংলাদেশের যে কোনো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী। সরকার যাবে, সরকার বদলাবে, কিন্তু এদের ক্ষমতা কেবল বাড়তেই থাকবে এবং এটাই তার সব সাহসের মূল উৎস। পিনাকী আমাদের কাছে অসৎ, অসাধু এবং একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসের নাম। তিনি এমন একটি গ্রুপকে উপজীব্য করে বলয় গড়ে তুলেছেন, যা দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। … আর পিনাকী, আপনাকে বলব, একমাত্র পিচাশেরই বিবেক থাকে না। মানুষের বিবেক থাকে। আমি জানি আপনি যে কাজ করছেন সেটি আপনার ঠান্ডা মাথার সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। আপনার ভিতর একটি কদাকার উল্লাস কাজ করে এ খেলায়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সব খেলার শেষ আছে। গেম ওভার আছে। আমরাও আপনাদের দেখছি আগ্রহ নিয়ে। মনে রাখবেন, কেউই দিন শেষে বিবেক ও বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। ’

বিশ্লেষকদের মতে, পিনাকী ভট্টাচার্য হিন্দু নাম ব্যবহার করে হিযবুত তাহরীর, আল-কায়েদা ও আইএসআইএসের মতো উগ্রবাদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের অপচেষ্টা করছেন, যাতে হিন্দু নাম ব্যবহার করলে মানুষ তার এসব অপপ্রচার বিশ্বাস করে। এটি উগ্রবাদীদের একটি অপকৌশল মাত্র। তিনি যেসব বক্তব্য প্রচার করেন, বাস্তব জীবনে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

তাজ হাশমী
বাংলাদেশে বাপ-দাদার ঠিকানাবিহীন রিফিউজি তাজ হাশমী। যার জন্মের ঠিক নেই সেই ড. তাজ হাশমী থাকেন কানাডার মন্ট্রিল শহরে। নিজেই দাবি করেন তার জন্ম হয়েছে ভারতের আসামে। তিনি সিরাজগঞ্জ বিএল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক পাস করে পরে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়ার দাবিদার তাজ হাশমী এখন ফেসবুক-ইউটিউবভিত্তিক বিভিন্ন চ্যানেলের মারাত্মক নেতিবাচক বিশ্লেষক। দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা, ধর্মীয় উসকানি ছড়ানো, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে সদা তৎপর এই ব্যক্তি। অনেকে তাকে পাকিস্তানের পেইড এজেন্ট বা ‘পাকি দালাল’ হিসেবেও অভিহিত করেন। স্বাধীনতার আগেই তিনি চলে যান পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এই স্বঘোষিত পন্ডিত কানাডায় বসে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সালাফি মতাদর্শের সমর্থক তাজ হাশমী দেশে জঙ্গিবাদ ও আইএসআইএসের মতাদর্শ প্রসারের জন্য এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি আফগান উগ্রবাদী জামাল আল-দীন আফগানির বিভিন্ন বক্তব্য উদ্ধৃত করে ফেসবুকে লিখে জঙ্গিবাদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। তাজ হাশমীর বিকৃত মানসিকতা ও ধর্মীয় উসকানির প্রমাণ মেলে সম্প্রতি তার নিজ ফেসবুকে দেওয়া কয়েকটি উদ্ধৃতি দেখলেই। তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়া মুফতি কাজী ইবরাহিমকে নিজের ফেসবুক পেইজে ‘কৌতুক অভিনেতা’ বলে বিদ্রুপ করেন। ১১ মে তিনি লেখেন, ‘ওয়াজের নামে আজহারি ও কাজী ইবরাহিমরা অশ্লীলতা ও উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে নারী নির্যাতনে উসকানি দিচ্ছেন। ’ তাজ হাশমী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাকে ‘বেহুদা বক্তব্য’ বলে মন্তব্য করে বিষোদগার ছড়ান। ৪ জুলাই নিজ ফেসবুক পেইজে তিনি ‘তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কিছু পুরনো কথা’ শিরোনামে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিষোদগার ছড়ান। ১ জুলাই গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, ‘মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও কাদের মোল্লার মতো নিরীহ মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ’ ১০ মে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে লেখেন, ‘আল্লাহর দরবারেও হাসিনার মাফ নাই!!’ ৭ মে তার ফেসবুক পেইজে লেখেন, ‘দেশের নামাজি ও রোজাদারদের ৯০% পাকা চোর। ’ ৪ মে লেখেন, ‘২০১৩-এর ৫/৬ মে রাতের আঁধারে হেফাজতের ৩০০ কর্মীকে (সরকার) গায়েব করেছিল। তেঁতুল হুজুর (আল্লামা আহমদ শফীকে কটাক্ষ করে) টাকা খেয়ে, আর জাতি কিছু না খেয়েই ভুলে গেল!’ ২৬ এপ্রিল তিনি দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড সম্পর্কে ‘বেক্সিমকোকে বয়কট করুন’ লিখে স্ট্যাটাস দেন।

তাজ হাশমী ধর্মীয় উসকানি ছড়ানোর লক্ষ্যে ২৬ এপ্রিল তার ফেসবুক পেইজে লেখেন, ‘অতি গরম বা ঠান্ডা দেশের মানুষের যৌন উত্তেজনা বেশি (এটা নাকি বিজ্ঞানে আছে)। তাই তারা দুই, তিন বা চার বিয়ে করতে পারে! তাহলে সেসব দেশের মেয়েদের কি যৌন উত্তেজনা কম? বিজ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করছি। ’ ২২ এপ্রিল সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়াতে তিনি লেখেন, ‘এই করোনা হাসিনার পতন ত্বরান্বিত করবে, তার পতন অনিবার্য। ’ ১৭ এপ্রিল তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিতে লেখেন, ‘নারীবিদ্বেষ, সৌদি রাজবংশ, হাসিনা সরকার ও ভারতবন্ধু ভালো মানুষ হতে পারে না। ’ ১৩ এপ্রিল লেখেন, ‘ড. হাসিনা কেউ বলে না, উনিই তো প্রথম দেশের টাকায় বিদেশ থেকে কতগুলো ফেইক অনারারি ডক্টরেট কিনে আনলেন!’ ৭ এপ্রিল লেখেন, ‘কাজ ফুরালেই হাসিনা বন্ধুদের পুরনো জুতার মতো ফেলে দেন। ’ এগুলো তাজ হাশমীর ধর্মীয় উসকানি ও রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছড়ানোর নমুনা মাত্র। তার পরিবারের কেউ কখনো পর্দা পালন করেছেন বলে কারও জানা নেই। সেই কালপ্রিট এখন নেতিবাচক মন্তব্য করছেন হিজাব ও পর্দা নিয়ে। তিনি একটি খোলা চিঠি লেখার নামে দেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালান। সেখানে অনেক অবান্তর প্রশ্ন তুলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালান।

তাজ হাশমী কানাডায় অবস্থানকারী আরও দুই কালপ্রিট টিটো রহমান ও নাজমুস সাকিবের সঙ্গে ভুঁইফোড় ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভিতে বিশ্লেষণে অংশ নেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু পরিবার, দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, শিল্পগ্রুপসহ বিভিন্নজনের নামে অশালীন, মিথ্যা ও আজগুবি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া তিনি কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনকে খোলা চিঠি নামে বিভিন্ন অবান্তর বিষয়ের অবতারণা করে বিষোদগার ছড়ান। এ ছাড়া কয়েকজন ইউটিউবার ও ফেসবুকে বাংলাদেশ থেকে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া কয়েক ব্যক্তি তার সঙ্গে নিয়মিত টকশোতে অংশ নেন।

তাজ হাশমীর বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ড. তাজ হাশমী নামে এই ব্যক্তির মস্তিষ্ক বিকৃত। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টকশোতে পাগলের প্রলাপ বকে যাচ্ছেন। আর একশ্রেণির মানুষ না বুঝেই তাকে বড় বিশ্লেষক বা বুদ্ধিজীবী উপাধি দিচ্ছেন। মূলত ধর্মীয় উসকানি ছড়ানো এবং উগ্রবাদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তাজ হাশমী।

(সংবাদ সূত্রঃ বাংলা নিউজ)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top