Close

ফ্রান্সে বঙ্গবন্ধুর ৫৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত

ফ্রান্সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করেছে ফ্রান্স আওয়ামী লীগ।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) প্যারিসের অদূরে সোনার বাংলা রেস্টুরেন্টের হলরুমে দিবসটি পালিত হয়।

ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এম এ কাশেম এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কয়েসের সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিব।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মোতালেব খাঁন, কবি মোস্তাফা হাসান, অধ্যাপক অপু আলম, নজরুল চৌধুরী, ফয়সাল উদ্দিন, আমিন খাঁন হাজারী, জয়নাল আবেদীন, চৌধুরী মারূফ অমিত সহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, ১০ জানুয়ারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে বাংলার বিজয়ের পূর্ণতা লাভ করে। বিধ্বস্ত বাংলার অবকাঠামো ও অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করে একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে।

এ সময় বক্তারা বলেন, কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর শাসনামলে বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। পাশাপাশি দেশে চলমান হত্যা, নৈরাজ্য, ভাংচুর, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপর হামলা, থানা লুট সহ মৌলবাদের উত্থান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা আরও বলেন, ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে দলের চার থেকে পাঁচ হাজার নেতাকর্মী নিহত ও আহত হওয়া, দেশের শেয়ারবাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার, ব্যাংক লুটপাট, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেন। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় ফিরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত  করেন উপস্থিত নেতাকর্মীদের সাথে সংগঠনের সভাপতি এম এ কাশেম।

উল্লেখ্যঃ ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। দীর্ঘ নয় মাস কারাভোগের পর পাকিস্তানের কারাগারে তিনি এর আগে ৮ জানুয়ারি মুক্তি লাভ করেন। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোররাতে, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।

১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতারা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতারা এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তিনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’

এদিন দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখো মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top