Close

বাজেট প্রণয়নে তথ্য ও স্বচ্ছতার অভাব

budget

দেশের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে তথ্য-উপাত্তে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে কোথাও কোথাও আইনের লঙ্ঘন করা হচ্ছে। রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। এসব কারণে বাজেটে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

এছাড়াও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী, পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, আইন ও বিচারসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রনজিত কুমার চক্রবর্তী এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সরকারের আর্থিক খাতের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। যথাসময়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা জানা যায় না।

এতে বলা হয়, রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের মধ্যে গরমিল রয়েছে। ব্যাংক ঋণের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএমইডির (সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) দেওয়া তথ্যের সঙ্গে অর্থ বিভাগের তথ্যে মিল নেই। তিনি বলেন, অডিট রিপোর্ট ঠিকমতো প্রকাশ হয় না।

বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার তথ্য জানা গেলেও প্রকৃত খরচ জানা যায় না। তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি হলে সরকারের নীতি গ্রহণে অসুবিধা হয় বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিরা। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন তারা।

ড. রেহমান সোবহান বলেন, পলিসির সুফল পেতে গুণগত মানসম্পন্ন ডেটা জরুরি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি খাতের বাইরে থেকে ডেটা নিতে হয়। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা পাওয়া যায় না। এতে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ জিডিপির প্রবৃদ্ধির অর্ধবার্ষিক হিসাব প্রকাশের পরামর্শ দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বলেন, ‘এটা করা হলে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং জিডিপির হিসাব নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দেয়, এর অবসান ঘটবে।’ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাজেটকে আরও স্বচ্ছ হতে হবে এবং বাজেট প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘শুধু বাজেট প্রণয়ন করলেই হবে না, এমপিদের দায়িত্ব হচ্ছে বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করা।’ আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ না হলে এবং সহজভাবে সরবরাহ না করা গেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নীতিনির্ধারকদের সমস্যা হবে। এজন্য তথ্য-উপাত্ত কীভাবে সহজভাবে সরবরাহ করা যায়, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আব্দুস শহীদ বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত একটি বড় ইস্যু এবং চ্যালেঞ্জও বটে। পর্যাপ্ত ডেটা না থাকলে কোনো কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। এর অভাবে বাজেট প্রণয়ন ব্যাহত হবে।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সরকারি আয়-ব্যয়ের ডেটা উন্মুক্ত না। এখানে যথেষ্ট অস্বচ্ছতার ঘাটতি আছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমার নির্বাচনি এলাকায় যত গরিব লোক আছে, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি। ‘গত সাড়ে তিন বছরে কেউ আমাকে বলেনি, আপনার এলাকায় বাজেট কত, কত খরচ হলো।’ জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ৩০০ এমপির তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। বাজেট তৈরিতে কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি ছাড়া কোনো করারোপ করা যায় না। অথচ এটা নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা হয় না।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘উন্নয়ন বেশি করতে চাইলে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ সহজ করতে হবে।’ সাবেক অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আর্থিক খাতের প্রায় সবক্ষেত্রেই অটোমেশন হচ্ছে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে তথ্য সরবরাহ আরও সহজলভ্য হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক দিক হচ্ছে বাজেট সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে বাজেট আরও স্বচ্ছ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top