Close

বাবাকে ‘অমানুষ’ বলা সেই শিক্ষার্থীকে নিয়ে বান্ধবীর পোস্ট

রাজধানীর দক্ষিণখানে একটি ১০তলা ভবনের ছাদবাবাকে ‘অমানুষ’ বলা সেই শিক্ষার্থীকে নিয়ে বান্ধবীর পোস্ট

আতকু মায়শা নামে সানজানার এক বন্ধু এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন এক পোস্ট দিয়েছেন। এটাকে হত্যা বলে মনে করছেন তিনি। তুলে ধরেছেন বেশ কিছু যুক্তি। নিচে তার পোস্টটি তুলে ধরা হলো।

‘দক্ষিণখান থানায় মাগরিবের সময় আমি আর নিলয় ভাই যখন পৌঁছালাম থানা চত্বরে তখন সানজুকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি। পুরো চত্বরে খালি একটা অ্যাম্বুলেন্স, যেখানে শুয়ে আছে সানজু। ফ্যামেলি মেম্বার বলতে খালাতো – মামাতো বোন তিনজন ছাড়া কেউ নেই। তার বাবা (পশু একটা) পলাতক, মা বাসায়। অ্যাম্বুলেন্সের কাছে যেতেই তার কাজিন ফোন দিয়ে খুঁজতেন কেউ আতকুকে চেনেন, তার নাম্বারটা দিতে পারবেন? আমি ঠিক তখন সামনেই। বললাম আমিই আতকু, (সানজু এই নামেই ডাকতো আমাকে)। আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে ধরে কেঁদে দিলেন। হাসপাতালে নেয়ার পথে সানজু নাকি আমাকে আর মাস্তুরাকে খুঁজছিল। কি করলাম আমি শেষ সময়টাতেও থাকতে পারলাম না তোর পাশে। তখনও আমি জানি না কি কি শুনতে যাব, দেখতে পাব। মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না এসব কিছুর জন্য।

শনিবার সকালে তার পশুরূপি বাবা তাকে মারধর করে প্রায় মৃত বানিয়ে ফেলেন। প্রথমে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিলে তারা ট্রিটমেন্ট দিতে অস্বীকার জানান। এটি দুপুর ১টার দিকের ঘটনা। তখনও সে জীবিত ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে গেলে দুটি ইনজেকশন দেয়ার পর সানজু মৃত্যুবরণ করে। পরে আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ৩টার দিকে সানজুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শরীর ভর্তি আঘাতের দাগ, একটি পা ভাঙা এবং কোমরের হাড্ডি ভাঙা। মানুষ এত নির্মম কীভাবে হতে পারে। এটি যে প্রথমবার তাও নয়। প্রায় ওই পশুরূপি মানুষ তার ফ্যামিলির সদস্যদের মারধর করতেন। গত ঈদে ৯৯৯- এ কল দিয়েও কোনো সাহায্য পায়নি। এ জন্য হয়তো এদিনও ফোন দেয়নি ৯৯৯- এ!

তার কাজিন থেকে আরও জানতে পারি, তার মা নাকি বলছে মেয়ে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মারা গেছে। তাও আবার ১০ তলার ছাদ! লাফ দেয়ার কারণ হিসেবে বলেছে বাপ মেরেছে তাই। ময়নাতদন্তের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই জানতে পারি যে মা এবং ফ্যামিলির কিছু মানুষ ময়নাতদন্ত করতে দিতে চাচ্ছেন না।

আমি সানজুকে দেখতে চাই। শেষ বারের মতো ধরতে চাই। আমাকে ধরতে দেয়া হয়নি। ছবি দেখিয়েছে। কিন্তু ছবি দেখে আমি এতটুকু নিশ্চিত হয়েছি আমার সানজু সুইসাইড করেনি। একদমই না। তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তাকে। এখন ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।

পরবর্তীকালে অনেক মানুষ এবং আমাদের ব্র্যাকের অনেকে স্টুডেন্ট আসার পর ফ্যামিলি রাজি হয় ময়নাতদন্ত করতে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নেয়া হয়।

মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পর ফ্যামিলির মানুষরা নাকি টাকা পয়সা অফার করেছে মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য। এটা তাদের অন্য ফ্যামিলি মেম্বাররাই জানিয়েছেন। কত কি বিস্তারিত জানি না।’

মায়শা আরও লিখেন, ‘সবাই থানা ত্যাগ করার পর মধ্যরাতে দক্ষিণখান থানা থেকে ব্যাক করি। কিন্তু কিছু প্রশ্ন, কিছু কমনসেন্স, কিছু লজিক!!!

১। একটি মানুষ ১০ তলা থেকে লাফ দেয়ার পর দুইটা হাসপাতাল ঘুরল এবং জীবিত ছিল! কথাও বলতে পারছিল একটু একটু। কীভাবে সম্ভব?

২। ১০ বা ১২ তলা থেকে পড়ার পর ডেডবডি এত অক্ষত কীভাবে থাকে? না কোনো রক্ত বের হয়েছে, না মগজ বের হয়েছে, না থেঁতলে গেছে বডি!

৩। বডিতে শুধু আঘাতের দাগ এবং দড়ি দিয়ে বেঁধে যে মারা হয়েছে হাতে সেটির দাগ স্পষ্ট। ছাদ থেকে লাফ দিলে এগুলো আসলো কোথা থেকে?

৪। চিরকুটটাকে সবাই সুইসাইড নোট বলছেন! আচ্ছা বলুন তো কোথায় সে লিখেছে, তার আত্মহত্যার জন্য বাপ দায়ী? সে লিখেছে তার মৃত্যুর জন্য বাপ দায়ী? সে বুঝতে পেরেছিল তাকে আজকে পিটিয়েই মেরে ফেলা হবে। কোনটি সুইসাইড নোট আর কোনটি মার্ডারের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য লিখে যাওয়া নোট একটু পার্থক্যটা বুঝিনি আমরা।

৫। গত ঈদেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ৯৯৯- এ ফোন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো সাহায্য করেনি। ঈদের ছুটির জন্য নাকি লোকবল ছিল না থানায়! হাস্যকর। এটা কেমন প্রশাসন ভাই?

৬। আমাদের কিছু ফ্রেন্ড যায় তার বাসায়। তারা গিয়ে বাসার সামনে পিছে সব জায়গা খুঁজে যে কোথায় সে পড়েছিল লাফ দেয়ার পর। কিন্তু কোনো ব্লাড বা কিছুই খুঁজে পায়নি। এবং পাশের কনস্ট্রাকশন সাইটের লোকদের জিজ্ঞাস করার পর তারাও বলে আজকে এমন কিছু তো ঘটেনি।

৭। সানজুকে মেডিকেলে প্রথম নিয়ে যায় ড্রাইভার, দারোয়ান আর ইলেকট্রিশিয়ান। কেন তার মা যাননি? দারোয়ান ও বলতে পারেননি কোথায় মরদেহটা পড়েছিল ছাদ থেকে। ফ্যামিলি মেম্বারদের এটা জিজ্ঞাস করলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। কেউই জানে না কখন, কয়টায়, কোথায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েছিল!!!

৮। বাবা কিছু না করলে পলাতক কেন?

৯। ফ্যামেলি কিছু না করলে ময়নাতদন্ত করতে চাচ্ছিল না কেন?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top