গতকাল (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির ঢাকার সমাবেশ থেকে দলটির ঘোষিত ১০ দফা নিয়ে তীব্র আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
বিএনপির ১০ দফা সংবিধান, আইন, আদালতের কবর দিয়ে অসাংবিধানিক অস্বাভাবিক জংলি সরকার আনার ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাস, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পক্ষাবলম্বনের কালো দলিল মনে করছেন রাজনীতিবিদরা।
১০ দফা দিয়ে বিএনপি আবারো প্রমাণ করল যে, তারা দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে অসাংবিধানিক অস্বাভাবিক জংলি সরকার আনার ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পথই আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধ, জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস ওদুর্নীতির বিচার বন্ধ করা। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজদের মুক্ত করা। বিএনপি সংবিধান, আইন, আদালত কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। এই হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণের দেওয়া মন্তব্যের সার–সংক্ষেপ।
বিএনপির ১০ দফা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ষ্টাটাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের তরুণ সংগঠক ইব্রাহিম খলিল নিপু। তিনি বিএনপির ১০ দফার প্রত্যেকটির সাথে নিজস্ব যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। যা হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
বিএনপি’র ১০ দফা নিয়ে আমার ভাবনা-
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে
– তাইলে বাকি ৯ দফা’র তো হিসাবই শেষ ! শুরুতেই দফার রফাদফা !
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
– কিন্তু ৯৬ এ খালেদা জিয়া নিজেই বলেছিলেন পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নেই ! এছাড়া গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করবে কমিশন। এখন তাদের ভাষায় পাগল আর শিশুকে কি এনে বসালে খুশি হবে ? ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া অগনতান্ত্রিক দলের গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রকে গিলে খাওয়ার এই ফন্দি মানুষ বুঝে আর উনাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধ্যে মামলা এবং উনার সন্তান তারেকের মাজা কিন্তু ভেঙ্গেছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার!
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ওই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
– লেভেল প্ল্যেইং ফিন্ড কোনটা আব্দুর রহমানেরটা না ইয়াজউদ্দিনেরটা ?
ইভিএম হলো সারা পৃথিবীতে চোর মারার কল। সে কলে তো চোরেরা ভয় পাবে, বিএনপি কেন ? কারন বিএনপি এই দেশের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ ভোট চোর। একদম আইএসও’র বাপ কতৃক। এই জন্যই ব্যালট চায়, চুরি করবে রাতের বেলায়। কিন্তু ভোটের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করা আওয়ামী লীগ কি সেটা হতে দেবে ? আলবাত না।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।
– আসছে উট পাহাড়ের নিচে। সব দফার আসল মতলব। এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, ১০% কমিশন খাওয়া, যুদ্ধাপরাধী, খুনী, আগুন সন্ত্রাসী ছেড়ে দাও বললে এই লাইনটা পারফ্যাক্ট হতো। ব্যাপারটা এমন আমাকে চিৎকার করে মানুষ মারার অধিকার দিতে হবে, টাকা মারার অধিকার দিতে হবে, ধর্ষণের অধিকার দিতে হবে। আহারে, সোনাগো আমার।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা-
-সে কি ! এত বার ক্ষমতায় গিয়েও বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করেনি বিএনপি ! ওহখালেদা জিয়া তো আমার “ভুলেই গিয়েছিলেন”। নিজের বেলা ঠিক আর পরের বেলায় ধিক ! ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো অপপ্রচারকারিদের জন্য। তাতে তাদের কেন খারাপ লাগছে। কারন অপপ্রচারকারি কারা সেটা তারা সব থেকে ভালো জানে। কি নোংরা একটা দল। এত উলঙ্গ কিভাবে হয় একটা দল !
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল। –
– মনে পরে যায় দৌড় সালাউদ্দিনের কথা, মনে পরে যায় সাইফুর রহমানের মাটির নিচে গ্যাস রেখে কি লাভ তত্ত্ব, মনে পরে যায় কানসাট। সেগুলো আজ আর হয়না। সরকার যদি জনবিরোধী হয়ে এসব করতো আপনাদের মত চোরেরা নয় মানুষ থাকতো রাস্তায়। এই দাবী যদি গনমানুষের হতো তাহলে আপনাদের চেচাতে হতো না। শেখ হাসিনার চেয়ে এই দেশের মানুষকে বেশি কেউ চিনে না, তাদের নিয়ে বেশি কেউ ভাবে না।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
– সত্যি কথা। কিন্তু আমি নিশ্চিত এদের ধরতে গেলেই বিএনপি ৪ আর পাঁচ নাম্বার দাবীর মত সাত নাম্বারে বলবে নিরীহ ব্যাবসায়ীদের মুক্তি দিতে হবে। মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই দেশে চোরের মা কে আর চোক কে সে তো প্রমানিত।
৮. বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
– বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত এসেছে কার ? কোন প্রধানমন্ত্রী আর তার পরিবার কালো টাকা সাদা করেছিলো ঘোষনা দিয়ে ? বিদ্যুতের নামে খাম্বা দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরেছিল কার নেতা যেন ? ৯৬ এ শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধ্বস হলেও ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে কেন তাদের বিচার করলো না ? কারন ঐ চোরেরা ছিলো বিএনপির লোক। কারন ঐ চোরেদের অর্থায়নেই ক্ষমতায় গিয়েছিলো তারা। ফালু-আব্বাস গং দের মানুষ চেনে। পিন্টু-মিন্টু’র কথাও সবাই জানে।
৯. গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
– অপারেশন ক্লিনহার্ট, সীমা, বৌদ্ধ ভিক্ষু, পুরোহিত, মা-মেয়ে এভাবে শুধু সংকেতে বললেও চার পৃষ্টা লাগবে। এই দেশে সবচেয়ে বেশি হিন্দু অত্যাচার করেছে কারা তাদের সংখ্যালঘুরাই ভালো চেনে। এই জন্য তারা তাদের পছন্দ করেনা। ফলস্বরূপ বিএনপি আর তার দোষ্র জামাতের চিরকালীন হিংস্রতার শিকার তারা। দয়া করে আর যাই করেন এই নির্যাতিত মানুষদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু দেখিয়ে তাদের জ্বালা বাড়াবেন না।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।
– আপনারা তো ১৪ বছর ক্ষমতায় ছিলো তারা কেন করে নাই বিচার বিভাগকে আলাদা। বরং এই প্রক্রিয়াতে কোন সরকার যদি বাঁধা দিয়ে না থাকে তবে সেটা শেখ হাসিনার সরকার।
পরিশেষ একটাই কথা এটা মোটেও দশ দফা দাবী নয়, এটাকে বড়োজোর ফকরুল ভাঁড়ের ১০ টি জোকস বলা যেতে পারে।