Close

বিদায় রাজনীতির মায়েস্ত্রো, দ্য লীডার সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী

মাসুদা ভাট্টি: শেখ হাসিনা দেশের বাইরে গেলে দলের দায়িত্ব কেন সব সময় সাজেদা চৌধুরীকে দিয়ে যেতেন? এই প্রশ্ন একদিন এক প্রবীণ রাজনীতিবিদকে করেছিলাম, বললেন, দায়িত্ব নেয়ার জন্য চওড়া কাঁধের আর কাউকে দ্যাখ তুমি? আমার প্রিয় মানুষ, চওড়া কাঁধের, রবীন্দ্রনাথকে প্রাণ সঁপে দেয়া আর রাজনীতিকে জীবন উৎসর্গ করা সাজেদা চৌধুরী চলে গেলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন বন্দুক হাতে, ওষুধ হাতে আর শরণার্থী শিবিরে রাতদিন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দানকারী হিসেবে।বহু পদ দিয়ে খেতে ভালোবাসা মানুষটি খাওয়াতে ভালোবাসতেন, একা খেতে পারতেন না। প্রাণের সংগীটি যখন বেঁচে ছিলেন তখন দু’জনে মিলে আপ্যায়ন করতেন।সাজেদা আপা রাজনৈতিক কাজে বাইরে গেলে ছেলেমেয়েদের দ্যাখাশোনার কাজ করতেন আকবর সাহেব। সংসার জীবনেও দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে বেঁচে ছিলেন আমার প্রিয় আপা।

মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, একবার নগরকান্দার তালমায় এক বাড়িতে সন্ধ্যাবেলা গম গম করে কে যেন কথা বলছিলেন, এক ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করছিলেন, “ও বিটা (ভদ্রলোক) কিরারে অমন কইরা কতা কয়?” প্রশ্নকারিনীর দিকে তাকিয়ে উত্তরদাত্রী বলেন, “আরে উনি বিটা না বিটার (পুরুষের) বাপ সাজেদা চৌধুরী, যার সামনে কোনো বিটা সাহস কইরা খাড়াবার পারে না”। আপাগো আর কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবো? কারে গিয়া বলবো যে, অমুকরে একটু বইলা দ্যান আপা, অমুকের ভাইয়ের চাকরীডা জানি অয়। ফোনটা তুলে সংগে সংগে বলেবন, দ্যাখরে বাবা চাকরীটা ছেলেডার খুব দরকার, দ্যাখো তো কিছু করা যায় কিনা? নগরকান্দা থানাটা মডেলের মত হয়ে গেল সাজেদা চৌধুরীর হাতে, ইস্কুল-রাস্তা-মাদ্রাসাসহ কত সরকারী প্রতিষ্ঠান যে তিনি ওখানে নিয়ে গেলেন মানুষের কাজে আসবে বলে!

বঙ্গবন্ধুর সংগে নাকি সাজেদা আপার দ্যাখা হয়েছিল ইস্টিমারে, গোয়ালন্দ ঘাটের কাছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রাজনীতিতে আসতে, তিনি এসেছিলেন। কোনোদিন বঙ্গবন্ধু পরিবার আর আওয়ামী লীগের সংগে বেঈমানি করেননি। যখন রাষ্ট্র নিষেধ করে দিয়েছে শেখ হাসিনাকে পানি খাওয়ানো যাবে না, নিতান্ত প্রয়োজনে শৌচালয় ব্যবহার করতে দিতে ভীত বোধ করেছে মানুষ তখন যে মানুষটি শেখ হাসিনাকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন তিনি সাজেদা চৌধুরী। জীবন তার পূর্ণতায় ভরা, আর পূর্ণতার সংগেই শূণ্যতার সহাবস্থান। প্রকৃত রাজনীতিবিদশূণ্য হওয়া এদেশের একালের নিয়তি। সাজেদা চৌধুরী সবকিছু শূণ্য করেই গেলেন আজ। রাষ্ট্র হারালো একজন বিরলপ্রজ রাজনীতিবিদ, একজন বলিষ্ঠ নারী-কন্ঠস্বর আর ব্যক্তিগতভাবে আমি হারালাম আমার প্রিয়তম আপাকে।

বিদায় রাজনীতির মায়েস্ত্রো, দ্য লীডার সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট।

(ফেসবুক থেকে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top