Close

‘মধু হই হই’ গানের তালে দুই হাত বেঁধে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

Screenshot

‘মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলা’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক যুবকের দুই হাত বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় গত মাসে এ ঘটনা ঘটলেও রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

এরই মধ্যে এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওই যুবককে পেটানো হচ্ছে। দুদিন আগে ভাইরাল ভিডিওটি নজরে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশ জানিয়েছে, গান গেয়ে যে যুবককে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায়। এমনকি গান গেয়ে মারতে মারতে ওই যুবকের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল দুর্বৃত্তরা। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।

তার নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। থাকতেন নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। হত্যার ঘটনাটি গত ১৪ আগস্ট ঘটলেও তা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে শনিবার।

নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান জয়বাংলা প্রতিদিন ডটকমকে বলেন, গত ১৪ আগস্ট নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন সিএসসিআর হাসপাতালের সামনে থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহতের স্ত্রী শারমীন আক্তার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহতের চাচা মোহাম্মদ হারুন ১৫ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, লোহার সঙ্গে দুই হাত বেঁধে মারধর করার ভিডিও ফেসবুকে দেখে হামলার শিকার যুবককে পরিচিত মনে হয়। হামলার শিকার যুবকের সঙ্গে ১৪ আগস্ট লাশের পরনে থাকা শার্টের মিল পাওয়া যায়। পরে নিহতের স্ত্রীকে থানা পুলিশ ডেকে পাঠায়। থানায় এসে শনাক্ত করেন যাকে পেটানো হচ্ছে সেই আর কেউ নয়, তারই স্বামী শাহাদাত হোসেন।

স্বজনরা জানিয়েছেন, শাহাদাত হোসেন নগরীর বিআরটিসি এলাকার ফলমন্ডীতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তারকে বিয়ে করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে বাদী মোহাম্মদ হারুন দেখতে পান, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে তার ভাতিজা শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে আছে।

এর আগে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

ওই দিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী শারমীন এবং মামলার বাদী হারুন। সেদিন রাতে মৃত অবস্থায় শাহাদাতকে হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী।

এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন বলেন, এক যুবকের দুই হাত বেঁধে গান গেয়ে কিছু লোক মারধর করছে এমন একটি ভিডিও আমাদের নজরে আসে। ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে জানতে পারি মারধরের শিকার যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন। তার স্ত্রী থানায় এসে ভিডিওতে যে যুবককে পেটানো হচ্ছে তাকে শনাক্ত করেন। তবে মারধরকারীদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top