Close

”ম্যারিটাল রেইপ” শব্দটি নিয়ে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত

খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন: বিয়ে মানেই যৌনতার অনুমতি। দীর্ঘদিন জল্পনাকল্পনা, টাকাপয়সার শ্রাদ্ধ ঘটিয়ে অনেক ধুমধাম করে যে সুসজ্জিত বিবাহবাসর সেখানে রেইপের প্রশ্ন আসে  কেন

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দযৌনতাযেখান থেকে একটি নতুর প্রাণের  সঞ্চার তাঁর আগমন বার্তা।অথচ এই শব্দ চয়নেইঅলিখিত কঠোর নিষেধাজ্ঞা।

আমাদের সমাজে বিয়ের আগে আমরা পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা, আর্থিক সামর্থ্য দেখি, গায়ের ফর্সা রঙ দেখি কিন্তু পাত্র/পাত্রীরসাথে শারীরিক চাহিদা নিয়ে কথা বলা অপ্রয়োজনীয়ই নয় গর্হিত অপরাধ।   

বিবাহ পরবর্তী জীবনে যৌনতা নিয়ে ক্ষোভ, হতাশা, পাওয়ানা পাওয়া নিয়ে কথা বলাটা চরম নির্লজ্জতা, অসভ্যতা, রীতিমতধৃষ্টতার পর্যায়ে পরে।    

আধুনিক পরিবার গুলোতে বিয়ের আগে পাত্রপাত্রী কথা বলতে পারে বেড়াতে যেতে পারে কিন্তু ধর্মে বিয়ের আগে শারীরিক স্পর্শবা মিলন হারাম। পাত্রপাত্রী অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটির জন্য

জানা জরুরী —-

) অনেক ছেলে/মেয়ে জন্মই নেয় এসেক্সুয়াল হয়ে।এসেক্সুয়াল মানে যাদের মাঝে কোন ধরনের যৌন তাড়না নেই।

) জেন্ডার ফ্লুয়িড হচ্ছে তাঁরা যারা দেখতে এক রকম মানসিকতায় অন্য রকম। অর্থাৎ দেখতে পুরুষ হলেও চেতনায় নারী কিংবাউল্টোটা।অনেক সময় তাঁরা

আইদেন্টিফাই করতে পারে না বা বুঝতেই পারে না তাঁরা নিজেরা আসলে কি চায় ?

) সমকামী নারী/পুরুষ সম্বন্ধে আমরা জানি।

অধুনা বিজ্ঞান বলে তাঁরাও স্বাভাবিক। তাঁদের জন্মই তাঁদের এমন অবস্থার জন্য দায়ী। সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং তাঁদের এই রূপে পৃথিবীতেএনেছেন। আমরা অতি ক্ষুদ্র সাধারণ মানুষ স্মৃতিকর্তার ইচ্ছার সমালোচনা করার অধিকার রাখি না।

ছাড়াও কিছু মানুষের মাঝে মনোবৈকল্য এবং বিকৃতি থাকে এক ধরণের বিকৃতিকে বলা হয় মেসোকিস্ট বা মর্ষকামী সোজাবাংলায় বলতে গেলে মিলনের সময় স্ত্রীর উপর নিষ্ঠুরতা এবং পাশবিক আচরণ।

অনেক মানুষ আবার স্ত্রীকে রেইপ বা যৌন নির্যাতন করাটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে। নারীর অনিচ্ছায় তাঁকে যদি জোরপূর্বকবাধ্য করা হয় তাই রেইপ বা ধর্ষণ বলে বিবেচিত।

চিকিৎসা শাস্রে উপরোল্লখিত সব সিমটমকেই মোটামুটি স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি এবংওষুধ প্রয়োগ প্রয়োজন হয়ে পরে।

একজন ভদ্র,মেধাবী, সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক নারী/পুরুষের মাঝে এই সমস্যাগুলো থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের পূর্বে নারী/পুরুষ জানতেই পারেন না সে নিজে মূলত মর্ষকামী কিংবা ধর্ষকামী

পুরুষ যদি একান্ত সময়ে স্ত্রী বা পার্টনারকে নির্যাতন করে সেটিকে ধর্ষকাম বা মর্ষকাম বলে যার ইংরেজিস্য্যাডিজম।

স্যাডিজম বা ম্যাসোকিজম এক ধরনের যৌন বিকৃতি বা Sexual Perversion. জটিল হলেও এই দুইটি Disorder —-এরঔষধ এবং সাইকোথেরাপি দিয়ে ভাল করা সম্ভব।

 আমাদের সমাজে যৌনতা চরম লজ্জাজনক, আপত্তিকর, নোংরা এবং নিষিদ্ধ শব্দ হিসেবে বিবেচিত বিধায় কখনো আলোচনারটেবিলে আসে না ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে আপন অধিকাংশ পিতামাতাই জানেন না তাঁর সন্তান আসলে কোন শ্রেণী ভুক্ত

 

সত্য ঘটনা

) একটি মেয়ের বিয়ের মাস পর অসুস্থ হয়ে পরলে মা প্রথম জানতে পারলো  একান্ত সময়ে মেয়েটির স্বামীর পাশবিক যৌননির্যাতনের কথা। ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিবাহে এখন দুই সন্তানের জননী। অনেক দেখে শুনে নির্বাচিত প্রথম স্বামীর বিরুদ্ধেএকটাই অভিযোগ ছেলেটির চাহিদা অন্যান্য পুরুষের চেয়ে আলাদা যা পুরন করা মেয়েটির পক্ষে অসম্ভব ছিল।

) নরমাল ডেলিভারির সময় অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের স্ত্রিচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে বিয়ের পর এক মাস ক্রমাগতরক্তক্ষরণে যে মেয়েটির অকাল মৃত্যু হল তাঁর মূলত স্ত্রিচ এবং গাইনির ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন ছিল। লজ্জা এবং জ্ঞানেরঅপ্রতুলতায় জানলোই না কেউ মেয়েটির চিকিৎসা প্রয়োজন। একটি মেয়ের খবর আমরা জেনেছি কিন্তু হরহামেশাই অনেকমেয়েই এমন মৃত্যুমুখে পতিত হয় যাদের খবর অজানাই রয়ে যায়    

) প্রেমিকপ্রেমিকা লুকিয়ে প্রথম মিলনকে স্মৃতিময় করার উদ্দেশ্যে সেক্সটয় ব্যাবহার করেছে। ফল হচ্ছে মেয়েটির যোনিপথ, ইউটেরাস এবং পায়ুপথ ছিঁড়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মৃত্যু। মেয়েটি নিশ্চয়ই যন্ত্রণায় চিৎকার করেছে, নিষেধকরেছে কিন্তু ছেলেটি শুনেনি। অবশেষে প্রচণ্ড কষ্ট,ব্যথা আর রক্ত শূন্যতায় মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মেয়েটির এতোরক্তক্ষরণ কি ছেলেটি স্বাভাবিক বলে মনে করেছিল ?   

এই একই ঘটনা যে কেবল পুরুষ দায়ী এমন নয় নারীও আলাদা, অস্বাভাবিক  কিংবা বিকৃত চাহিদা সম্পন্ন হতে পারে।

সামাজিক চাপে আমরা পুত্রকন্যা কে বিয়ের জন্য জোরাজোরি করি কিন্তু জানিও না আসলে সে কেমন এবং কি চায় ?

বিয়ের পর বর/কণে কে মেনে নাও, মানিয়ে নাও, ঠিক হয়ে যাবে সব না বলে সঠিক কারণ অনুসন্ধান জরুরী।    

শুনতে অস্বস্তি অপ্রীতিকর মনে হলেও বিয়ের পরবর্তীতে বর/কণের একান্ত জীবনে সমস্যা আছে কি না জানা অভিভাবকদেরদায়িত্ব।

সমাজ কি বলবে, মানুষ কি ভাববে এসব ছাড়ুন সবার আগে আপনার পুত্র/কন্যার সুস্থভাবে বেঁচে থাকা।

(ফেসবুক থেকে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top