অমি রহমান পিয়ালঃ যে শিশুর জন্ম আগুন ঝড়ের মাঝে, বুলেট বৃষ্টি আর মর্টারের আওয়াজে, তার শৈশবটা এলোমেলো হওয়ারই কথা ছিল। দেশসেরা পরমাণু-বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সন্তান তার একমাত্র পরিচয় ছিল না। তা ছাপিয়ে গিয়েছিল তার অন্য কোষ্ঠী- তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাতি। এই অদৃশ্য জলছাপটা উল্কির মতো এমনভাবে বসে গেছে যে সজীব ওয়াজেদ জয় শত স্বকীয়তায়ও নিজেকে আলাদা করতে পারেননি। ১৫ অগাস্ট পরবর্তী তাকেও বেছে নিতে হয়েছে ফেরারী জীবন। নাম পরিচয় ভাড়িয়ে চালিয়ে যেতে হয়েছে গোপন যাপন। ঘাতকের বুলেট তাকেও খুঁজে বেরিয়েছে, যার হাত থেকে রেহাই পাননি শিশু রাসেলও। অথচ কয়দিনইবা নানাকে কাছে পেয়েছেন। সেই আমলের স্মৃতি তার বয়সী সবাই সেলুলয়েড থেকেই কপি করে। তারপর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে মায়ের সঙ্গেই ফিরলেন দেশে। শেখ হাসিনার শত লড়াইয়ের সাক্ষী, শত সংগ্রামের ক্ষতে প্রলেপ বোলানো জয়ের ত্যাগ কয়জনই বা জানে! কয়জনই বা আমলে নেয়! তারপরও তার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতিটি কার্যক্রম শ্যেন দৃষ্টিতে মেপে যায় ছিদ্রান্বেষীর দল। কারণ তিনি শেখ মুজিবের নাতি, শেখ হাসিনার ছেলে।
এর বাইরে কি তার কোনো পরিচয় নেই? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই বলি। সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে আমার ব্যাপক আগ্রহ জাগলো ২০০৭ সালে। সে বছরের শুরুতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২৫০ জন ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার’-এর নাম প্রকাশ করে। এটা তারা প্রতিবছরই করে। পেশাগত বুৎপত্তি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ভবিষ্যত বিশ্বকে আরো উন্নত করার প্রয়াসী সম্ভাবনাময়দের স্বীকৃতি ছিল তা। সেই প্রতিভাবানদের তালিকায় ছিলেন জয়। একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদ হিসেবে। তখন আওয়ামী লীগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বোল উঠেছে মাত্র। বছরখানেক পর এটা আওয়ামী নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো হলো- জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মানের প্রত্যয়। যথারীতি বিরোধী শিবির এটাকে কৌতুক হিসেবে রাজনৈতিক বয়ানে ও বুদ্ধিজীবিতায় ব্যবহার করা শুরু করলো। বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়ের ২ বছর আগে যখন এই লেখাটি লেখছি, তখন সেই বিরোধীরাও এর পুরো ফায়দা নিচ্ছে। এই এতো বড় কাণ্ডের নেপথ্যে যে মানুষটি তাকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু কেউ দেয়নি। আমার ধারণা দিলেও তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানাবেন! অনেকটা তার বাবার মতোই।
আইটি পার্ক, আসন্ন ফাইভ জি নেটওয়ার্ক কিংবা অন্তরীক্ষে চলমান বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে চাইলে অনেক কিছুই লেখা যায়। যাহোক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় সময় নষ্ট না করি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুণগানও নতুন করে গাওয়ার কিছু নেই। হাতের কাছেই গুগল, উইকিপিডিয়ায় নাম লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন সব তথ্যই। বরং বঙ্গবন্ধুর নাতি বলেই আওয়ামী বিরোধী শিবিরে তার একটা মিথ্যে প্রতিকৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সেদিকে একটু নজর দিই। সমীহ এবং ঈর্ষাজনিত ভয় থেকেই যে এই মিথ্যাচার তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই কোনো। সুবাদেই প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বে পারিবারিক উত্তরসূরী নির্বাচনের যে ট্রেন্ড, সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় কতখানি আঁটেন! তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই বা কতখানি?
আওয়ামী লীগের যে কোনো নির্বাচনী পোস্টারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সঙ্গে জয় অনেকদিন ধরেই আসীন। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কোনো ইঙ্গিতেই তিনি প্রশ্রয় দেননি। ‘৯৬সহ এবার চতুর্থবার দল ক্ষমতায়। তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি, দলের কোনো পদ নেননি, আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগে জয়পন্থী কোনো স্রোতের কথাও শোনা যায়নি। কোনো রকম সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতার চর্চা না করেও আওয়ামী রাজনীতির গতিপথের, ভবিতব্যের এবং আন্তর্জাতিক মানোন্নয়নের নেপথ্যের কলকাঠি যেন তার হাতেই। এ প্রসঙ্গে কোট করতে হয় খোদ সজীব ওয়াজেদ জয়কেই। ২০০৮ সালে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কিছু লেখা বাংলায় অনুবাদ করেছিলাম আমার ব্লগে। তার একটিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘গণতন্ত্রকে উন্নত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তার বিবর্তন ঘটানো। এটি হচ্ছে বিপ্লবের বিপরীত একটি প্রক্রিয়া যা ধাপে ধাপে দীর্ঘ মেয়াদে ঘটে। প্রায়ই মনে হবে আসলে কোনো কিছু বদলাচ্ছে না। তবে পরিবর্তনটা অবশ্যম্ভাবী। সেজন্য শুরুর পর যুৎসই অনুষঙ্গও জরুরী। কারণ এজন্য দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ক্রমবিকাশের এই ধারায় সেরারাই টিকে থেকে পরিকাঠামোর বিকাশ ঘটায়। গণতন্ত্রে যেসব নেতা ও দল জনন্নোয়নে বেশি ভূমিকা রাখে, তারাই স্থায়ী এবং আরও শক্তিশালী হয়। আর যারা ব্যর্থ, তারা আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে এবং একসময় অস্তিত্বহীন হয়ে পরে। রাজনৈতিক বিবর্তনের মূল কথা এটাই।’ উল্লিখিত রাজনীতিতে তিনি পুরোটাই অদৃশ্য, কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার আঁচ কি গুরুতর মেলে না?
সমালোচকেরা বলেন, জয় স্মার্ট এবং মেধাবীদের পিছনে আলাদা সময় দেন, তাদের নিয়েই সেমিনার করেন, সাধারণের প্রতি তার কোনো তাগিদ নেই যেন! এবং তাকে নিয়ে আজব আজব রূপকথারও শেষ নেই। সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম যেটি শুনে, তা সুইডেনের। সেখানকার এক লোক ফেসবুকে আমাকে নক দিলো। বললো ভাই, আপনাদের সজীব ওয়াজেদ তো এখন সু্ইডেনে। কেন এসেছেন জানেন? সুইডিশ সরকার বাংলাদেশকে শখানেক তাপানুকুল এবং পরিবেশবান্ধব কোচ উপহার দিয়েছিল। তিনি কোচগুলো ফেরত দিয়ে নগদ টাকা নিতে এসেছেন! হাহাহাহা, মানুষের কল্পনার দৌড় কতদূর ছোটে! কয়দিন আগেই ফেইসবুকে ভাইরাল হলো একটা প্রাসাদের ছবি, জয় নাকি কিনেছেন কত হাজার কোটি টাকা খরচ করে। পরে জানা গেল সেটা সৌদি কোন এক যুবরাজের প্রাসাদ!
বিদেশে পড়াশোনা করে অনেক বিশিষ্ট মানুষই দেশে ফেরত এসেছেন। ক্যারিয়ার শিকেয় তুলে ছুটে এসেছেন জন্মভূমির ঋণ শোধে। অথচ এই সুধীজনের তালিকায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম নিতে সবারই কুণ্ঠা। কারণ? তিনি শেখ মুজিবের নাতি। শেখ হাসিনার ছেলে। এদের প্রশংসা করতে নেই। পাপ হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ শাসন করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের থেকে এক টাকাও বেতন নেননি। তার নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা। অবৈতনিক। বাংলাদেশের জনগণ থেকে এক টাকাও বেতন নেননি। এবং তাকে আমলে নিতেই হবে। গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের যাবতীয় সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর, তুরুপের তাস সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলার জয়। শুভ জন্মদিন।…
#JoyBangla #SajeebWazed
#SajeebWazedJoy
(ফেসবুক থেকে)