আজ রবিবার (১০ নভেম্বর) শহীদ নূর হোসেন দিবস। ১৯৮৭ সালের এই দিনে তৎকালীন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নূর হোসেন। বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ও ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান ধারণ করে এদিন মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রেরণাদায়ী ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত। নূর হোসেনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয়। অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।
আওয়ামী লীগ দিনটি পালন করে ‘নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে। বিএনপি পালন করে আসছে ‘ঐতিহাসিক ১০ নভেম্বর দিবস’ হিসেবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সেভাবে প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি পালন করছে না। তবে নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আজ বেলা ৩টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতা-কর্মীদের জড়ো হয়ে মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। দলটির ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
তবে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ব্যানারে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত’ শিরোনামে কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে তারা। রাত থেকেই সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা সেখানে অবস্থান নিতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, তারা আজ কোনও জমায়েত বা মিছিল করার চেষ্টা করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর অবস্থানের মুখোমুখি হতে হবে।
শহীদ নূর হোসেন সে সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কর্মী হিসেবে প্রাণ দিয়েছিলেন।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতায় নূর হোসেনকে নিয়ে লিখেছেন-
সারারাত নূর হোসেনের চোখে এক ফোঁটা ঘুমও
শিশিরের মতো জমেনি, বরং তার শিরায় শিরায়
জ্বলেছে আতশবাজি সারারাত, কী এক ভীষণ
বিস্ফোরণ সারারাত জাগিয়ে রেখেছে
ওকে, ওর বুকে ঘন ঘন হরিণের লাফ,
কখনো অত্যন্ত ক্ষীপ্র জাগুয়ার তাকে
প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে জ্বলজ্বলে
চোখে খর তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে,
এতটুকু ঘুমাতে দেয়নি।