জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন আলোচনা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচন ঘিরে। চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনে এমপি হয়ে সংসদে যাওয়ার দৌড়ে আছেন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেত্রী।
এই তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। এর মধ্যে বেশিরভাগই প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের সদস্য।
ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত ৫০টি আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কমিশনের অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তারিখ রেখে চলতি সপ্তাহে সংরক্ষিত নারী আসনের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, কল্যাণ পার্টি একটি, স্বতন্ত্র ৬২টি আসন পেয়েছে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজনসহ), জাতীয় পার্টি দুটি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে।
একাদশ সংসদে চট্টগ্রাম থেকে দু’জন নারী সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে তিনও হতে পারে।
একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার ও আওয়ামী লীগ নেত্রী নিলুফার কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান এবং আরেক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে একমাত্র এই নারী প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।
ওয়াসিকা আয়শা খান বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক। দশম সংসদেও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
একাদশ সংসদে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও একাধিক সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এবার মন্ত্রিসভা গঠনের আগেও তার নাম নিয়ে জোর গুঞ্জন ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে তাই ওয়াসিকা আয়শা খানের নাম আলোচনায় আসছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে।
এবারও সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী কিনা জানতে চাইলে ওয়াসিকা আয়শা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১০ বছরে নিষ্ঠা ও সততার সাথে জনকল্যাণকর কাজসহ দলীয় ও সংসদীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। নেত্রীর কৃপায় সুযোগ হলে, আদর্শ সমুন্নত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাব।”
আগ্রহীদের মধ্যে উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী প্রভা পালিত বলেন, “সংরক্ষিত ও সরাসরি নির্বাচনের জন্য ৮ বার আমি দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছি। এবারও হাটহাজারী আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। প্রায় চার দশক ধরে আমি দলীয় রাজনীতি করছি।
“যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম। ২০১৩ সাল থেকে আমি উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমার সাংগঠনিক কার্যক্রম বিবেচনা করে নেত্রী যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে দায়িত্ব পালন করব।”
গত বছর চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল।
কোভিড মহামারীর সময়ে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা সেলিনা খানের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের সুসম্পর্কও আছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে মক্কায় অবস্থানরত সেলিনা খান বাদল বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতেই সবকিছু। চাইবে অনেকেই, তা বলে সবাই সংরক্ষিত আসনে সংসদ হবেন বিষয়টি এই রকম নয়। এই পদের জন্য কী কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন আশা করি সবাইকে জানানো হয়েছে। আমি সংরক্ষিত নারী আসনে উপযুক্ত কিনা, সেটা সম্পূর্ণ নেত্রীর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।”
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি কাজ করছি। মহামারীর সময়ে দেশের সংকটকালে জনগণের পাশে ছিলাম।
“এছাড়া গত বেশ কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া, মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাস প্রচার এবং জঙ্গীবাদ বিরোধী সচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করছি। সেই ঝুঁকি আমি নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে জননেত্রী তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। সুযোগ দিলে আশা করি সেই লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারব।”
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সদস্য জিনাত সোহানা রাজনীতির পাশাপাশি ফারমিন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএর সদস্য।
প্রয়াত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে লুবনা হারুন বর্তমানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এই পদে আগ্রহের কথা জানালেন।
লুবনা হারুন বলেন, “চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি কঠিন সময়ে। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এখন দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে আছি।
“আমার পিতার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কথা সকলেই জানেন। ২০১৮ সালে আমি চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার চাইনি। জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আশা করি উনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব। উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের কাছে তিনি ভোটযুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন।
স্বামীর পরাজয়ের পর এখন সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে চান নদভীর স্ত্রী ও প্রয়াত জামায়াত নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, “১০ বছর ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জননেত্রীর নৌকাকে জনগণের হৃদয়ে পৌঁছাতে রাতদিন এক করে কাজ করেছি। সেখানকার নারীদের ‘জয় বাংলা’ বলতে শিখিয়েছি আমি। এর আগে সেখানে নারীদের মধ্যে সংগঠনের কার্যক্রম ছিল না।
“আমি নারীদের মধ্যে কাজ করতে আগ্রহী। রাজনীতি শুরুর আগে এনজিও ও শিক্ষা খাতে নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করেছি অনেকদিন। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রোল মডেল। তিনি যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে আমি দায়িত্ব পালন করতে পারব।”
এছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিনী হাসিনা মহিউদ্দিন, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফসারুল আমীনের স্ত্রী ডা. কামরুন্নেছা এবং আরেক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দীন আহমদের মেয়ে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী শারমিন সুমি।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।