পঞ্চগড়ে মহাসড়কের ধারে স্তূপ করে রাখা বালুর ওপর একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন সেলিনা আক্তার নামের এক নারী (৩৮)। খবর পেয়ে পঞ্চগড় থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ওই প্রসূতিসহ নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল বাজারসংলগ্ন পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের ধারে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে ভর্তির পর ওই নারীর পরিচয় জেনে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। এরপর তাঁর স্বামীসহ স্বজনেরা হাসপাতালে আসেন।
ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের তেলীপাড়া এলাকার রিকশাচালক রইস উদ্দীনের স্ত্রী। তাঁর বাবার বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামে। এই দম্পতির ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সকালে ওই নারীকে সড়কের ধারে সন্তান প্রসব করতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। পরে তাঁরা স্থানীয় নারীদের ডেকে ওই প্রসূতিকে সহায়তা করতে পাঠান। এ সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস এবং সদর থানার পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে প্রসূতি ও নবজাতককে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ওই প্রসূতির স্বামী রইস উদ্দীন বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় তাঁদের। এর এক বছর পর একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয় এবং জন্মের পরপরই সে মারা যায়। এর বছরখানেক পর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর স্ত্রীর। এর মধ্যে আবার একটি ছেলেসন্তান জন্ম নেয় তাঁদের। অভাবের সংসারে ঠিকমতো চিকিৎসা না মেলায় তাঁর স্ত্রীর মানসিক সমস্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে। বাড়িতে দেখাশোনার লোক না থাকায় বছরখানেক আগে স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে রেখে আসেন তিনি।
স্ত্রীকে দেখতে মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াত করতেন জানিয়ে রইস উদ্দীন বলেন, এরপর আবার গর্ভধারণ করেন তাঁর স্ত্রী। শনিবার সকালে বাবার বাড়ির কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী। পরে সড়কের ধারে সন্তান জন্ম দেওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি।
প্রসূতি ও নবজাতক শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রাজ্জাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আনার সময় নবজাতকের নাক-মুখে ও শরীরে বালু লেগে ছিল। সড়কে পাশে সন্তান প্রসব করায় এমনটা হয়েছে। পরে নবজাতকে পরিষ্কার করে চিকিৎসা দিলে সে স্বাভাবিক হয়। এরপরও তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য ভর্তি রেখেছি।’
পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন বলেন, ওই নারীর স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তাঁরা হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতকের পাশে আছেন।