কথায় আছে, ঘ্রাণ দিয়ে যায় চেনা। অলংকার বা পোশাকের মতো খালি চোখে দেখা না গেলেও মানুষের মনে দাগ কেটে যায় সুগন্ধি। সাজসজ্জার ড্রেসিংটেবিলে তাই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে থাকে সুগন্ধি। রাজপরিবারের বিয়েতে সুগন্ধির ব্যবহার থাকবে না, তা–ই কি হয়।
প্রিন্সেস ডায়না বিয়ের পোশাকেই ঢেলে ফেলেছিলেন সুগন্ধি
তাকে বলা হতো গণমানুষের রানি। ব্রিটিশ রাজপরিবারের মানুষের যেখানে সাধারণ লোকজনের সঙ্গে মেশা নিষেধ, সেখানে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যেতেন প্রিন্সেস ডায়না। মানুষের সঙ্গে মিশতে, মানুষের পাশে দাঁড়াতেই ছিল তাঁর আনন্দ।
প্রিন্সেস ডায়না ও প্রিন্স চার্লসের বিয়ে ছিল রাজপরিবারের নতুন এক অধ্যায়। প্রায় ৩০০ বছরের প্রথা ভেঙে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ডায়না ও চার্লস। ৪৮০ বছরের পুরোনো চার্চে বিয়ের পর সদ্য বিবাহিত প্রিন্সেস ডায়নাকে চুমু খেতেই ভুলে গিয়েছিলেন প্রিন্স চার্লস। সেই ভুল শুধরে রাজপ্রাসাদের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রিন্সেস ডায়না ও প্রিন্স চার্লস চুমু খেলেন। সেটিই হয়ে দাঁড়াল ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিবাহের আনুষ্ঠানিকতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ।
২৫ ফুট লম্বা পোশাকে ছিল ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের কাজ। আর সেদিন তাঁর সুগন্ধির তালিকায় ছিল হুবিগো ফ্রান্সের ‘কাল্কা ফ্লোরাল’। জেসমিন, চন্দন ও বার্গেমটের সুবাস থেকে তৈরি সুগন্ধি এতই পছন্দ হয়েছিল যে ব্যবহার করতে গিয়ে নিজের ড্রেসে অনেকখানি ফেলে দিয়েছিলেন প্রিন্সেস ডায়না। সেটি লুকাতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার প্রায় পুরোটা সময় পোশাকের সে অংশটা ধরে রেখেছিলেন তিনি। ছবিতে দেখে মনে হয়েছে হাঁটার সুবিধার জন্য ড্রেস উঁচু করে রেখেছেন তিনি। কিন্তু সত্যিটা ছিল, নিজের রাজকীয় পোশাক থেকে সুগন্ধির দাগ গোপন করার জন্যই তিনি গাউনটা ওভাবে ধরে ছিলেন। হুবিগো ফ্রান্সের ‘কাল্কা ফ্লোরাল’ এখনো পাওয়া যায়। দাম পড়বে ১১ হাজার থেকে ৫১ হাজার টাকা।
কেট মিডলটনের বিয়ের জন্যই বানানো হয়েছিল এ সুগন্ধি
১০ বছরের পরিচয়কে পরিণয়ে পরিণত করেছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটন। তাঁদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে এক ফ্যাশন শোতে কেটকে দেখে ভালো লাগে প্রিন্স উইলিয়ামের। ৮ বছরের প্রেম শেষে ২০১১ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। ভিক্টোরিয়ান ডিজাইনের বিয়ের পোশাকে আলেকজেন্ডার ম্যাককুইন এনেছিলেন আধুনিকতার ছোঁয়া।
বিয়ের দিন গায়ে মেখেছিলেন ইলুমিনিয়াম লন্ডনের ‘হোয়াইট গার্ডেনিয়া প্যাটেলস’। আগের রানি ও রাজবধূদের মতো এটিও ছিল ফুলেল সুগন্ধি, কিন্তু একেবারেই নতুন। রাজবধূ কেট মিডলটনের জন্য প্রথম বানানো হয়েছিল এই সুগন্ধি। এরপর আস্তে আস্তে শুরু হয় এই সুগন্ধির বাজারজাতকরণ। ১০০ মিলি সুগন্ধি কিনতে খরচ পড়বে ১২৫ পাউন্ড বা সাড়ে ১৪ হাজার টাকা।
মেগান মার্কেল যে সুগন্ধি ব্যবহার করেছিলেন, তা একান্তই তাঁর নিজস্ব
প্রিন্সেস ডায়নার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারির বিয়ে এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজপরিবারের সর্বশেষ বিয়ে। যদিও রাজপরিবার আর পদবি সবই ছেড়েছেন এই জুটি। ব্রিটিশ রাজপরিবারে আসার আগে মেগান মার্কেল ছিলেন অভিনেত্রী। নিজেদের বন্ধুদের মাধ্যমে হ্যারির সঙ্গে পরিচয়, সেখান থেকে এক বছরের মাথায় প্রেম থেকে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় তাঁদের সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই রাজপরিবারের বাঁধাধরা নিয়মে থাকতে চাইতেন না হ্যারি। তাঁর বিয়ে নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের অক্টোবরে রাজকীয়ভাবেই সম্পন্ন হয় এই দুজনের বিয়ে। বিয়েতে বেশ সাধারণ সাজেই সেজেছিলেন মেগান। কিন্তু সুগন্ধির ব্যাপারে কোনো ছাড় দেননি। বেছে নিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পছন্দের ব্র্যান্ড ‘ফ্লোরিস’। বার্গামোতো দি পোশিতানো নামের এই সুগন্ধিতে ছিল ভ্যানিলা ও বিশেষ একধরনের লেবুর সুগন্ধ। এটিই তালিকার একমাত্র সুগন্ধি, যা বাজারজাত করা হয়নি, শুধু মেগান মার্কেলের জন্যই বানানো হয়েছিল।