Close

প্যারিসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

প্যারিস: একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয়  একটি দিন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন এটি সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর এই দিনটি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দূতাবাস ফ্রান্স ইউনেস্কো সদর দফতরে বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

১২টি দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত মনমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ইউনেস্কোর শিক্ষা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সহকারী মহাপরিচালক স্টেফানিয়া জিয়ান্নিনি।

স্টেফানিয়া জিয়ান্নিনি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, মাতৃভাষায় কথা বলা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। বিশ্বের প্রতিটা ভাষার নিজস্বতা রয়েছে। এ ভাষাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে।

ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা তার স্বাগত বক্তব্যে, গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষা শহীদের প্রতি।

তিনি বলেন, ৪০ দিনে বিশ্বের একটি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বের ৪০ শতাংশ শিশু এখনো তাঁদের মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তৎপর ও কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

খন্দকার এম তালহা আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষার ইতিহাস এক রক্তাক্ত বেদনার ইতিহাস। বাঙ্গালি জাতি তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের উদ্যোগ এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান, শ্রীলংকা, সার্বিয়া, আজারবাইজান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের শিল্পীগণ তাদের বৈচিত্রময় পরিবেশনায় উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে ‘বহুভাষাবাদ’ এবং ‘ভাষার প্রতি ভালবাসা’ প্রতিপাদ্যের উপর দূতাবাস নির্মিত একটি অংশগ্রহণমূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় যেখানে ইউনেস্কোতে নিযুক্ত ৩৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালবাসা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদ এবং নির্বাহী পরিষদের সভাপতিগণ, হাইতির শিক্ষামন্ত্রী এবং বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিগণ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিকগণ অংশগ্রহণ করেন।

প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটি ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

একুশের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধাজানান কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা।

এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন, রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা। আলোচনা পর্বের শুরুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর লিখিত বাণী পাঠ করা হয়। বক্তব্য রাখেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাশেম এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কয়েস। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের সামরিক সচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এ ছাড়া যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্যারিসের অদূরে ক্যাথসীমা এলাকায় অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ফ্রান্স আওয়ামী লীগ।

ফ্রান্স আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এম এ কাশেম। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা হাসানের পরিচালনায় এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কয়েছ।
পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধাজানান ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

একুশের সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল জুরেস পার্কে। সেখানে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে একুশে উদযাপন পরিষদ ফ্রান্স।

একুশে উদযাপন পরিষদ ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিষদের আহ্বায়ক সুব্রত ভট্টাচার্য শুভ এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এমদাদুল হক স্বপনের পরিচালনায় শহীদ বেদিতে একে একে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের পলিটিক্যাল মিনিস্টার কাজী এহসানুল হক, দূতাবাসের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান।

প্যারিস-১০ এর ডেপুটি মেয়র সিলভা রেফ, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাশেম, সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন কয়েস, সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেমসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে তারা এ দিবসটি পালন করছে আসছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top