চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার, আ. লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, আ, লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য এবং জাতীয় সংসদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৭ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এ ব্যাপারে তাঁর সম্মতি গ্রহণের জন্য গত মঙ্গলবার বিকেলে ইইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নন্দনকাননস্থ বাসভবনে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ মিলিত হয়েছিলেন। তিনি স্বভাবতই ছিলেন কুষ্ঠিত। কিন্তু সমবেত সামাজিকগণের “প্রবল আগ্রহ অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি অবশেষে সম্মতি জ্ঞাপন করলে ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সংবর্ধনা উপলক্ষে একটি সংবর্ধনা গ্রন্থ এবং একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিণ আখতারকে সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিককে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি গঠন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য ড. শিরিণ আখতার, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সচিব, কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ ও সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংবাদিক আসিফ সিরাজ, আ, লীগ নেতা জসিম উদ্দিন শাহ, সুজিত ভট্টাচার্য্য দোলন, সুজিত দাশ অপু, সুজিত চৌধুরী মিন্টু, রোজী চৌধুরী, মিঠু কুমার দাশ, সত্যজিৎ দাশ, শিল্পী শীলা চৌধুরী, বেবী দাশ নূপুর, রায় নন্দিনী, রোজী সাহা চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে তিনি সর্বপ্রথম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতাদের একজন ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন। ১৯৮০ ও ৮৪ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯২, ১৯৯৬, ২০০৪ এবং ২০১২ সালে সভাপতি এবং একই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে নিজ দলের আদর্শে অবিচল থাকেন । রাজনীতি করতে এসে মুক্তিযুদ্ধসহ বহুবার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৮০, ১৯৮৮ ও ১৯৯২ সালের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট চত্বরে তৎকালীন বিএনপির সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক তিনি হামলার শিকার হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁর পায়ের রগ কেটে দেয়। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনার মিছিলে পুলিশ কর্তৃক গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করার ঘটনায় তিনিও মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৯৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়িতে সশস্ত্র জামায়াত ক্যাডারদের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে অলৈাকিকভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।