বণিক বার্তা: দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ২০২৩ সাল শেষে গৃহিণীদের নামে জমা ছিল ২ লাখ ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার আমানত। পরিমাণের দিক থেকে তা দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের আমানতের চেয়েও বেশি। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ২ লাখ ৬৩৯ কোটি টাকা। আবার আমানতে প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও দেশের ব্যবসায়ী, প্রবাসী, শিল্পপতি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীদের চেয়ে গৃহিণীরা এগিয়ে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০১৯ সালেও গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত তাদের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৯ শতাংশ।
যদিও বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা ও জরিপ বলছে, দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ নারীর কাছে এখনো ব্যাংক সেবা পৌঁছেনি। শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের বিচারেও দেশের নারীরা এখনো বেশ পিছিয়ে। আবার যৌক্তিক মজুরির ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে অধিকার নিয়েও শোনা যায় নারীর বঞ্চনার অনেক অভিযোগ। উদ্যোক্তা হিসাবে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও নারীরা ব্যাংকগুলোর বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে। এত অপ্রাপ্তি, বৈষম্য, বঞ্চনা ও উপেক্ষার গল্পের বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে ব্যাংকে গৃহিণীদের গচ্ছিত আমানতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিস্টিক্সের সর্বশেষ সংখ্যার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা ছিল ব্যক্তিশ্রেণীর। চাকরিজীবী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, অনিবাসী বাংলাদেশী, কৃষক ও মৎস্যজীবী, অবসরে যাওয়া ব্যক্তি, ছাত্র, বাড়ির মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের নামে এ আমানত ব্যাংকে জমা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৯২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে চাকরিজীবীদের। আমানতের স্থিতির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে গৃহিণী বা বেগমরা। সে হিসাবে ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতের ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশের মালিকানাই গৃহিণীদের। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬৩৯ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ স্বাধীন পেশাজীবীদের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ৬৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।
গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে থাকা আমানতের পরিমাণ অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘গৃহিণীদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বেশ ভালো। সংসারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে তারা দক্ষতার পরিচয় দেন। প্রতি মাসের সঞ্চয় থেকে তারা ব্যাংকে কিছু অর্থ জমা রাখতে পারেন। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ গৃহিণীদের নামে ব্যাংকে জমা আছে, সেটি একেবারেই অস্বাভাবিক। কোনোভাবেই গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে লাখ লাখ কোটি টাকা জমা থাকা সম্ভব নয়। তার মানে কর ফাঁকি দেয়া কিংবা কালো টাকা জমা রাখার জন্য গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার হচ্ছে। এটি একেবারেই পরিষ্কার। এজন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই।’
ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্য গ্রাহকদের কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টমার) ফরম পূরণ করতে হয়। এতে নির্ধারিত কলামে গ্রাহকের পেশা উল্লেখ থাকে। বিবাহিত যেসব নারী শুধু ঘরদোর সামলান তারা কেওয়াইসিতে নিজেদের পেশার স্থলে হাউজওয়াইফ বা গৃহিণী উল্লেখ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যেসব নারী চাকরি করেন তাদের আমানতের হিসাব চাকরিজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। আবার নারী শিক্ষার্থীদের আমানত জমা হয় স্টুডেন্ট হিসেবে। নারী উদ্যোক্তাদের আমানতও দেখানো হয় ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে। গৃহিণী হিসেবে কেবল তাদেরই দেখানো হয়, যারা আয়বিহীন এবং অর্থের জন্য স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত আমানতের সামান্য অংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত গৃহিণীদের। এ শ্রেণীর গৃহিণীদের আমানতের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। বাকি দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর বেগমদের। পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও বিভিন্ন উপায়ে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থবিত্তের মালিকদের বেগমরাই ব্যাংকে এ পরিমাণ অর্থ জমা করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতকারীদের মধ্যে গৃহিণীদের আমানতের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ বছরে ব্যাংকগুলোয় ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে গৃহিণীদের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ে পরিমাণের দিক থেকেও গৃহিণীদের আমানত সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গৃহিণীদের আমানত বেড়েছে ৮২ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। পাঁচ বছর আগে ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতকারীদের মধ্যে গৃহিণীদের আমানতের অংশ ছিল ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে এ অংশগ্রহণ বেড়ে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
গৃহিণীদের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ১২৭ কোটি টাকার আমানত বেড়েছে চাকরিজীবীদের। তবে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। গত বছর শেষে এ শ্রেণীর আমানত বেড়ে ২ লাখ ৬৩৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে পাঁচ বছরে ব্যবসায়ীদের আমানত বেড়েছে ৬৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা, এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। পাঁচ বছরে স্বাধীন পেশাজীবী তথা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীদের আমানত বেড়েছে ৫২ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে অনিবাসী বাংলাদেশী তথা প্রবাসীদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। পাঁচ বছরে ব্যাংকগুলোয় প্রবাসীদের আমানত ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে ব্যাংকে সবচেয়ে কম আমানত বেড়েছে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের। গত ডিসেম্বর শেষে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত এ শ্রেণীর মানুষের আমানত ছিল ৩৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এ সময়ে কৃষকদের আমানত বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বর্তমানে ছাত্রদের ব্যাংক হিসাবে আমানত জমা রয়েছে ২৪ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার। আর বাড়ির মালিক পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে ১৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকার আমানত জমা রয়েছে।
ব্যাংকে মেয়াদি আমানত জমা রাখার ক্ষেত্রেও গৃহিণীরা এগিয়ে রয়েছেন। গত ডিসেম্বর শেষে গৃহিণীদের মেয়াদি আমানতের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। গৃহিণীদের মেয়াদি আমানতের বড় অংশের মেয়াদ তিন থেকে ছয় মাস। মেয়াদ ছয় মাসের কম এমন আমানতের পরিমাণ ৫১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি আমানত আছে ৮ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এছাড়া গৃহিণীদের এক-দুই বছর মেয়াদি ১৬ হাজার ৪৬১ কোটি, দু-তিন বছর মেয়াদি ২ হাজার ২৪৫ কোটি ও তিন বছরের বেশি মেয়াদি ১৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গৃহিণীদের সঞ্চয়ী হিসাবেও ৭৩ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার আমানত জমা ছিল।
একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও শাখা ব্যবস্থাপক জানান, আয়কর রিটার্ন জমা দেন এমন শ্রেণীর সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের অনেকে সম্পদ গোপন রাখার জন্য নিজেদের স্ত্রী, মা ও সন্তানদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা রাখেন। আবার অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুস লেনদেনের ক্ষেত্রেও অনেকে পরিবারের নারী সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেন। মূলত এ কারণেই গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে এত পরিমাণ অর্থ জমা পড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের একটি অংশও আমানত হিসেবে গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় নানা সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দেয়া এ তথ্যের বাস্তবতা উঠে এসেছে। ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমের অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া এ ঠিকাদার জিকে শামীম নামেই বেশি পরিচিত। রাজধানীর নিকেতনের ওই অফিস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, মদসহ অন্যান্য অবৈধ উপকরণের পাশাপাশি ১৬৫ কোটি টাকা মেয়াদি আমানত বা এফডিআরের ভাউচার উদ্ধার করে র্যাব। বিপুল অংকের এফডিআরের মধ্যে ১৪০ কোটি টাকাই রাখা হয়েছিল জিকে শামীমের মা আয়েশা আক্তারের নামে। জিকে শামীমের নামে ছিল মাত্র ২৫ কোটি টাকার এফডিআর। অর্থ লেনদেনের জন্য জিকে শামীম তার স্ত্রী সামিমা সুলতানার ব্যাংক হিসাবও ব্যবহার করেছিলেন। অভিযান শেষে র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেছিলেন, জিকে শামীমের মায়ের কোনো আয় নেই। কিন্তু তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে।
দেশের আর্থিক খাতে লুণ্ঠনের অন্যতম হোতা প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। অন্তত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়ায় পিকে হালদার তার মা লীলাবতী হালদারের নাম ব্যবহার করেছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, লীলাবতী হালদারের হিসাবে ১৬০ কোটি টাকা জমা হয়েছিল। নামে-বেনামে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে টাকা বের করে নেয়ার ক্ষেত্রে পিকে হালদার তার বান্ধবীদের নামও ব্যবহার করেছিলেন বলে বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে।
বিদেশে অর্থ ও মানব পাচারের মামলায় কুয়েতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। অবৈধ অর্থ ব্যাংকে জমা রাখার জন্য পাপুল স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেছিলেন। পাপুল ও তার পরিবারের তিন সদস্যের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। আদালতকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী জানান, পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম অবৈধভাবে পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতেন। তাদের কোনো পেশা না থাকলেও জেসমিন ও ওয়াফার ব্যাংক হিসাবে যেসব লেনদেন হয়, তা মূলত পাপুল ও তার স্ত্রীর। এক্ষেত্রে এনআরবিসি, প্রাইমসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ৬১৭টি হিসাব ব্যবহার করা হয়। তাদের ব্যাংক হিসাবে ৩৫৫ কোটি টাকার বেশি পাওয়া গিয়েছিল।
দেশের অর্থনীতির আকার ৪৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও রাজস্ব আয় বাড়ছে না। সর্বশেষ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র ৩৬ লাখ করদাতা। ব্যক্তিশ্রেণীর আয়কর রিটার্নের মধ্যে খুবই নগণ্যসংখ্যক গৃহিণী রিটার্ন দাখিল করেন বলে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, চাকরিজীবী নারীদের বড় একটি অংশ আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও গৃহিণীদের রিটার্ন দাখিলের ঘটনা বিরল। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি।
দেশের শ্রমশক্তির বড় একটি অংশ বিদেশমুখী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী কর্মরত। প্রবাসী এ বিপুল জনগোষ্ঠীর একটি অংশের দেশে ব্যাংক হিসাব নেই। তারা স্ত্রীসহ স্বজনদের ব্যাংক হিসাবে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠান। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্সের অর্থের সিংহভাগই ভোগে ব্যয় হয়। তবে কিছু অর্থ আমানত হিসেবে ব্যাংকে জমা থাকে। অনেক প্রবাসী নিজের ব্যাংক হিসাবের বাইরে স্ত্রী ও স্বজনদের ব্যাংক হিসাবেও আমানত হিসেবে অর্থ জমা রাখেন।
ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ আমানত জমা হওয়ার পেছনে গৃহিণীদের সঞ্চয় প্রবণতারও ভূমিকা আছে বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান। তিনি বলেন, ‘চাকরিজীবী নারীদের আয় যেমন হয়, তেমনি ব্যয়ও হয়। কিন্তু প্রকৃত গৃহিণীদের তেমন কোনো ব্যয় নেই। স্বামী বা স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তারা সঞ্চয় করেন। অনেকে সংসার খরচের টাকা থেকেও সঞ্চয় করেন। উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করা অর্থও গৃহিণীরা ব্যাংকে রাখেন। ব্যাংকে গৃহিণীদের বড় অংকের আমানত জমা হওয়ার পেছনে এসব প্রেক্ষাপটের ভূমিকা রয়েছে। তবে অনেকে কালো টাকা পার্কিং করার জন্যও মা, স্ত্রী, কন্যার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেন।’