Close

সরকার পতনের ‘ব্লু প্রিন্ট’: বিমানবন্দর ও বিটিভি দখল করতে চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে আসলে সরকার পতনের একটি আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল এবং এই আন্দোলন দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে পরিকল্পিত হয়েছিল। সরকার পতনের জন্য সারা দেশে তাণ্ডব সৃষ্টি, নাশকতা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করার নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। আর এ কারণে ঢাকায় প্রায় পাঁচ লাখ ছাত্রশিবির, ছাত্রদল এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, মূল পরিকল্পনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বেগবান করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে ধাবিত করাই ছিল বর্তমান নাশকতার লক্ষ্য। আর এই নাশকতার জন্য তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখল করার পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল বিমানবন্দর। বিমানবন্দর দখল করে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান উঠানামা বন্ধ করে সরকারেক জিম্মি করতে চেয়েছিল। আর এ কারণেই ঢাকার উত্তরা এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী এবং ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদেরকে জড়ো করা হয়েছিল। সেখানে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের ক্যাডার ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিল বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সহিংসতার দ্বিতীয় টার্গেট ছিল সংসদ ভবন এবং গণভবনে আক্রমণ করা। এ কারণেই মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় অন্তত ২০ হাজার ভাড়াটে লোককে আনা হয়েছিল এবং সঙ্গে ছিল পেশাদার ভাড়াটে সন্ত্রাসী। বসিলা এলাকায় যারা সহিংসতার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল তাদেরকে রাখা হয়েছিল কেরাণিগঞ্জে নদীর ওই পাড়ে। লঞ্চ, টলার এবং নৌকার মাধ্যমে তারা এপারে এসে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর দৃঢ়তায় তারা সেখান থেকে বেশি দূর এগোতে পারেনি।
আর এই পরিকল্পনারই আরেকটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল ধানমন্ডির সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে। সেখান থেকে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা ২৭ নম্বর পর্যন্ত চলে এসেছিল বটে। কিন্তু ২৭ নম্বর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধের কারণে তারা আর এগোতে পারেনি। আর এ কারণে মোহাম্মদপুর এবং ধানমন্ডির এলাকায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল বিটিভি দখল করা। আর এ কারণেই রামপুরাতে বিপুল সংখ্যক পেশাদার সন্ত্রাসী, শিক্ষিত জঙ্গিদেরকে জড়ো করা হয়েছিল। বিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যখন পুলিশ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করছে সে সময় এক ফাঁকে কিছু শেপাদার দুর্বৃত্ত বিটিভিতে ঢুকে যায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বিটিভির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারেনি। এখানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। উত্তরা এবং রামপুরা এলাকায় অনেক তাণ্ডব এবং সহিংসতা হলেও শেষ পর্যন্ত জঙ্গি, ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
এই তাণ্ডবের চর্তুথ টার্গেট ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়ক বন্ধ করা যেন সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে যায়। আমদানিজাত পণ্য যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে এবং একই সঙ্গে রপ্তানির জন্য কোন পণ্যও যেন চট্টগ্রাম বন্দরে যেতে না পারে সে পরিকল্পনা ছিল নাশকতাকারীদের। এর ফলে সরকার দুর্বল হয়ে যাবে এবং সরকারের পতন ঘটবে। এ রকম একটি মাস্টারপ্ল্যান থেকে নাশকতার ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আরেকবার প্রমাণ করল তারা বিশ্বমানেরই শুধু নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা বাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top