চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরীসহ ৩ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার সকালে বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আখাউড়া সীমান্তের আব্দুল্লাহপুর নামক স্থান থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের রাউজানের (চট্টগ্রাম-৬) সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ ০৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
ফজলে করিম চৌধুরীর গ্রেফতারের পর ফ্রান্স প্রবাসী একজন সাংবাদিক এম এ হাশেম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
জয়বাংলা প্রতিদিন ডটকমের পাঠকদের জন্য সাংবাদিক এম এ হাশেমের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, রাউজানের সিংহপুরুষ পালাতে গিয়ে ধরা।
শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ায় রাউজানের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি, আজ ফজলে করিম গ্রেপ্তার হওয়ায় রাউজান সত্যিকারভাবে স্বাধীন হয়েছে।
ঘরে ঘরে মিষ্টি বিতরন উৎসব চলছে।
সারা বাংলাদেশ থেকে আলাদা একটি সংসদীয় এলাকা চট্টগ্রাম ৬ আসন রাউজান। রাউজানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার কথায়ও কাজ হতোনা কারণ সেখানে ছিল ফজলে করিমের রাজত্ব।
রাউজানে কোনো ধরনের নির্বাচন ছিলনা কারণ ফজলে করিম যাকে প্রার্থী নির্ধারিত করতেন সেটাই চুড়ান্ত। প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ প্রার্থী ঘোষণা করা অসম্ভব ছিল।
২০১৫ সালে ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন (আইপিও) এর মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির প্রধান হন ফজলে করিম চৌধুরী। পরের বছর বাংলাদেশে গিয়ে রাউজানে দেখলাম, চারিদিকে আইপিও’র নামে ফজলে করিমের বিশাল বিশাল ব্যানার। মনে প্রশ্ন জাগে, যিনি প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন সেই ব্যক্তি কিভাবে মানবাধিকার কমিটির নেতা!
সিদ্ধান্ত নিলাম আইপিও হেডকোয়ার্টার সুইজারল্যান্ড গিয়ে বিষয়টি জানতে হবে।
২০১৭ সালে আইপিও এর ১৩৫ তম অধিবেশনে বাংলাদেশের একমাত্র টিভি সাংবাদিক হিসাবে অংশ নিলাম। আইপিও কিছু ছোট কমিটি করে থাকে, যার মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি একটি।
সেসময় সাবের হোসেন চৌধুরী ছিলেন আইপিও এর প্রেসিডেন্ট।
ফুফাত ভাই প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবাদে ফজলে করিম চৌধুরী আইপিও এর একটি কমিটির প্রধান হওয়ার সুযোগ পান।
অধিবেশেনের দুইদিন আমি জেনেভায় ছিলাম, ফজলে করিমকে বুঝার সুযোগ পাই সেখানেই।
এলাকার এমপি হওয়ায় সন্ধ্যায় উনার হোটেলে গেলাম।
দেখলাম উনি লবিতে বসে বাটন ফোনে রাউজানে কাকে মারবে, ধরবে সেসব নির্দেশনা দিচ্ছেন।
সেখানে ফজলে করিম বললেন, ‘আরতুন বড় গুন্ড কন আছে’? (আমার চেয়ে বড় গুন্ডা কে আছে)
একজন সাংবাদিকের সামনে নিজের সম্পর্কে এমন কথা, কোনো সাংসদ বলতে পারে বিষয়টি আমার কাছে আশ্চর্যজনক।
ইসলামী ব্যাংক জামাতি ব্যাংক, রাউজানে তাদের শাখা করা যাবে না। কিন্তু আমার বাবা সেটা হতে দিয়েছেন এজন্য ২০১০ সালে ফজলে করিমের গুন্ডা বাহিনী আমার বাবাকে কিডন্যাপ করে।
আব্বা লাঞ্চিত হয়ে ছাড়া পান কিন্তু এমপির ক্রোধ থামেনি।
২০১২ সালে আব্বা প্যারালাইজড থাকা অবস্থায় বাড়ি থেকে ধরে নেওয়ার জন্য পুলিশ পাঠায় ফজলে করিম। পুলিশের সাথে আমি ফোনে কথা বলে একটু সময় নিই। এরপর ঢাকা এবং চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকে ফোন করলে তারা এমপিকে নিবৃত্ত করায়।
গতবছর আমি দেশ থেকে আসার কয়েকদিন পর ফজলে করিম গুন্ডা বাহিনী পাঠিয়ে আমাদের একটি দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়।
সাবেক এই এমপির সাথে আমি সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়ায়নি কিন্তু রাউজানে উনার বাহিনীর ত্রাস ছিল সর্বত্র।
ফজলে করিম সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই শুনতাম কারণ তার শহরের বাসা আমার ফুফুর বাড়ির সাথে লাগানো। তিনি কতটা ভয়ঙ্কর, অশ্রাব্য গালিগালাজ, হুমকি দিয়ে কথা বলা এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেন সেটা রাউজানের জনগন জানে।
যারা রাউজানের বাইরে থাকেন, তারা রাউজান সম্পর্কে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। রাউজানে ফজলে করিমের রাজত্বকালে বিরোধী দল বলতে কিছু ছিল না।
ফজলে করিম জেঠাত ভাই সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর এনডিপির লোক ছিলেন। আওয়ামী লীগের লোক না হয়েও শেখ হাসিনার কাছ থেকে ফজলে করিম নৌকা প্রতীক পেয়ে সাংসদ হয়েছেন।
যাদের রক্তের উপর রাউজানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের মধ্যে যারা জীবিত ছিলেন বিষয়টি তাঁরা মেনে নিতে পারেনি।
কারণ এনডিপির আমলে রাউজানে বাবর, মুজিবসহ অসংখ্য নেতা, কর্মীকে হত্যার কারণে ত্যাগী নেতারা রক্তের সাথে বেইমানী করে ফজলে করিমের কাছে বিক্রি হয়নি। এসব ত্যাগী কর্মীরা ফজলে করিমের পক্ষে কাজ না করায় এলাকায়ও যেতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ থেকে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েও দেবাশিষ পালিত পাঁচ বছর মেয়াদের একদিনও চেয়ারে বসতে পারেনি।
এসকল বিষয় স্বয়ং শেখ হাসিনাও জানতেন কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি।
রাউজানের সিংহ পুরুষ এভাবে পালিয়ে যাবেন বিষয়টি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য।
মানুষের কষ্ট, চোখের পানি, জন্মভিটায় যেতে না পারা, চাঁদাবাজি সম্পত্তি বেদখল, গুন্ডা বাহিনীর নির্মমতা, কথা বলতে না পারা, থানায় ধরে নিয়ে আটক নির্যাতন, রাউজানের কাহিনী বলে বা লিখে শেষ করা যাবেনা।
ফজলে করিম জীবিতকালে তাকে গ্রেপ্তার দেখবে রাউজানের মানুষ ভাবেনি কিন্তু আল্লাহ’র বিচার কি অভূতপূর্ব।
আমরা রাউজানবাসী এই জালিম, শাষকের শাস্তি চাই।
আর কেউ যেনো বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে না পারে।
এম এ হাশেম, ফ্রান্স প্রবাসী সাংবাদিক।