এই মহানায়িকার অভিনয়ের শুরুটা অত্যন্ত নাটকীয়। অভিনয়জগতের শুরু ‘নটীর পূজা’ নাটকে অভিনয় করে। সেখানে সবাইকে মুগ্ধ করেন অভিনয় দিয়ে। স্বামী ও শ্বশুরের উৎসাহে আসেন সিনেমায়। তাঁর অভিনিত প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ মুক্তিই পায়নি। কেননা কিছুদিন কাজ করার পরে অর্থাভাবে শুটিং বন্ধ হয়ে যায় ছবিটির। এরপর ‘সাত নম্বর কয়েদী’ সিনেমা তাঁর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। এই সিনেমার পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তর সহকারী নীতীশ রায় তাঁর নাম পাল্টে দিলেন সুচিত্রা। সিনেমার রুপালি পর্দায় নবজন্ম ঘটল সুচিত্রার।
উত্তমকুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে। ছবিটি বক্স অফিসে অসম্ভব সাফল্য লাভ করে। আর এই ছবির মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় উত্তম–সুচিত্রা জুটির। এরপর থেকে দশকের পর দশক পর্দায় এই জুটির প্রেমে মজেছিলেন দর্শক। সেকালের যুবতীদের কাছে সুচিত্রার নিজস্ব স্টাইল যেন ক্রমেই অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিল। তাঁর শাড়ি পরা বা চুল বাঁধার ধরন জনপ্রিয় ছিল পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি সমাজে। আভিজাত্য ও ফ্যাশন–সচেতনতার প্রতীক ছিলেন তিনি। উত্তম–সুচিত্রা জুটি প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেন।
সুচিত্রার বাংলা সিনেমায় অভিষেক নাটকীয় হলেও হিন্দি সিনেমার অভিষেক ছিল সাফল্যে ভরা। বলিউডে প্রথম ছবি ‘দেবদাস’। এই ছবিতে পার্বতী চরিত্রে স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুচিত্রা সেন। তবে প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ভারত সরকার ১৯৭২ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মাননা দেয়।
অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায় ‘চৌধুরানী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে না পারায় কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুচিত্রা সেন। পরে চলচ্চিত্রটি নির্মাণই করেননি সত্যজিৎ। সুচিত্রা সেন অভিনীত বাংলা সিনেমার সংখ্যা ৫২, পাশাপাশি ৭টি হিন্দি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।