গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের রেশ কাটতে না কাটতেই একাধিক দেশের কূটনীতিকরা বিবৃতি দিয়েছেন। তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখতে বলেছেন এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে যেন বিরোধী মতকে বন্ধ না করা হয় সে আহ্বানও জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল যে, কূটনীতিকদের এত তাড়াহুড়া কেন? বিশ্বে কূটনীতিবিদদের আইকন হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, একজন কূটনীতিকের প্রতিটি মন্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান। তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সবকিছু বুঝে পারিপার্শ্বিকতা অনুধাবন করে তারপরে যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের তাড়াহুড়ো দেখে প্রশ্ন উঠেছে তারা কি তাহলে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মানছেন না? কেন তারা এত তাড়াহুড়ো করছেন? এই তাড়াহুড়োর উদ্দেশ্য কি রাজনৈতিক? তারা কি বাংলাদেশে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক এরকম কিছু চাইছেন? সে কারণে কি তারা চটজলদি করে বিবৃতি গুলো দিচ্ছেন? এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের এই বিবৃতি গুলো একপাশে এবং একটি মতকে প্রতিফলিত করছে।
নয়াপল্টনে গতকাল কি ঘটেছিল তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য রয়েছে। একটি পুলিশের বক্তব্য রয়েছে, অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্য। পাশাপাশি পুলিশ যে সমস্ত আলামত নয়াপল্টন থেকে উদ্ধার করেছে সেই আলামত গুলো নিয়েও বিভিন্ন রকম প্রশ্ন উঠতে পারে। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বোমা রাখবে কেন? কেন সেখানে ১৬০ বস্তা চাল রাখা হবে? এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং মৌলিক। অথচ এই প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে খোঁজ খবর না নিয়ে, পুরো ঘটনা সম্পর্কে না জেনে কূটনীতিকরা যে বিবৃতি দিয়েছে তা বিএনপিকে সমর্থন দেয়ার শামিল। প্রশ্ন উঠেছে যে, কূটনীতিকরা কি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে? তারা কি যেকোনো একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ বাড়িয়ে বক্তব্য রাখতে পারে? শুধু গতকালের ঘটনা নিয়ে বক্তব্য না। এর আগে মানবাধিকার দিবস উপলক্ষেও মানবাধিকার দিবস নিয়ে ১৫টি দেশের কূটনীতিকরা যৌথ বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তারা বাংলাদেশে যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হয় সেই দাবিও করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়ার বাকি এখনো এক বছরের বেশি। এর আগে কেন এভাবে তারা বক্তৃতা, বিবৃতি দিলেন? সেটিও একটি প্রশ্ন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই কূটনীতিকরা নানা রকম মন্তব্য করছেন, নানা রকম হস্তক্ষেপ করছেন। আর এর কারণ স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো কূটনীতিকদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ করছে। বিএনপি আন্তর্জাতিক লবিস্ট ফর্মের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশ গুলোকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম কথা বলছে। যে কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটা ভুল ধারণা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। সেই ধারণা ধারণার সূত্র ধরেই কূটনীতিকরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করছেন বলে কোনো কোনো মহল মনে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে পাল্টা কূটনৈতিক তৎপরতা করা উচিত সেই কূটনৈতিক তৎপরতায় এক ধরনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ কারণেই কূটনীতিক দৌঁড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। আর এই সুযোগে কূটনীতিক পাড়াটা এখন বিএনপির দখলে চলে গেছে। গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ এবং আরও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের এরকম মন্তব্য সেই বিষয়টিকে আবার সামনে এনেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার