Close

জামাত কেন এ সরকারের কাছে নির্বাচন চাইছে না?

জামায়াত সবসময়ই বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি করে। তারা জানে জনসমর্থন নিয়ে প্রকাশ্যে দেশশাসন করা তাদের জন্য অসম্ভব। আর সে জন্যই তারা এখন বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জনসমর্থন ছাড়াই গোপনে শাসন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, ক্ষমতার বলয়ে থেকে তারা কেন এখন ইলেকশন চাইবে?

অনেকে এই সরকারকে এনজিওগ্রাম সরকার বলে আখ্যা দিচ্ছেন! এতে হয়তো ইউনুস সাহেব কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হচ্ছেন, খুশী হচ্ছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, জামাতের রাজনীতির কাছে তিনি একেবারেই নাদান। তাকে এবং তার কিছু সহকর্মীকে পুতুল হিসেবে আনা হয়েছে কেবলই বোরখা হিসেবে জামাতী শরীর ঢাকার জন্য।

কোটা ইস্যু শুরুই করেছে শিবির সেই দুই যুগ আগে। তবে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সফলতা দেখে এবারের এই আন্দোলনকে তারা সরকার পতনপূর্বক বিপ্লবী আবরণে ক্ষমতায় যাওয়ার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। সাধারণ ছাত্রের ছদ্মাবরণে তারা সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে অনেকগুলো বিষয় একই সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করেছে। যেমন, সাধারণ ছাত্রদের কোটা বিরোধী মনোভাব, বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ, ইসলামী দলগুলোর আওয়ামী বিদ্বেষী সেন্টিমেন্ট, চিংকুদের বিপ্লবী টাইপ বদলামী এবং আমেরিকার জিওপলিটক্স।

তবে চরম মজা পেয়েছি সেনা প্রধান ওয়াকারকে জামাতের কাছে বলদ বনতে দেখে। শেষের দিকে উনি টোপ গিলেছিলেন যে, সর্বদলীয় ইন্টেরিম সরকার সামনে রেখে উনিই পেছন থেকে দীর্ঘকাল দেশ চালাবেন! বেচারা বোকার মতো জামাতের সেই টোপ গিলে শেখ হাসিনাকে দেশত্যগে বাধ্য করলেন। দেশের ইতিহাস কলংকিত করে গণভবন, সংসদ ভবন এবং পিএমও অফিস মবের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে কৃত্রিম বিপ্লবী আবহ সৃষ্টি করলেন। সব দলের সমন্বয়ে ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট করে দেশ চালানোর ঘোষনা দিয়ে তার উপর আস্থা রাখতে বললেন।

কিন্তু ঘন্টাকয় পরেই ধাক্কা খেলেন, যখন সমন্বয়ক নামধারী শিবিরের মুখে শুনলেন তারা সেনা সমর্থিত সরকার চায় না, তারাই (শিবির) সরকারের রূপরেখা দেবে!! ওয়াকার সাহেব সেই ধাক্কায় যে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন, আর সোজা হতে পারেননি। সেই ক্ষোভেই মূলত: তিনি এ সরকারকে আইন শৃংখলা পুনোরুদ্ধারে বিন্দুমাত্র সহায়তা করছেন না। সেনাবাহিনী কলাগাছের মত দাঁড়িয়ে আছে, আর সবদিকে হরিলুট চলছে! ওয়াকারের ভাবটা এমন যে, দেখি আমারে ছাড়া তোরা কেমনে দেশ চালাস!

এদিকে সেনাবাহিনীকে সংযত রাখতে এবং নিজেদের জামাতি রূপ ঢাকতে জামাত-শিবির মাথার উপর নিয়ে এলো আমেরিকান পরাশক্তির আশীর্বাদপুষ্ট ড. ইউনুসকে। এক্ষেত্রে জামাতের ধারণা তারা আমেরিকাকেও বলদ বানাতে পেরেছে। জিওপলিটিক্যাল গ্রাউন্ডে আমেরিকা মনে করতেছে তারা মদদ দিয়ে সফলভাবে রেজিম চেঞ্জ করে তাদের পুতুল সরকার বসিয়েছে ইউনুসকে দিয়ে। অন্যদিকে জামাত মনে করে তারা আমেরিকার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে রেজিম চেঞ্জ করতে পেরেছে এবং আমেরিকাকে খুশি রেখে ড. ইউনুসকে বসিয়ে মূলত: তারাই সরকার পরিচালনা করছে।

বিএনপি’র কথা আর কি বলার আছে! সতেরো বছর মার খেয়েছে আওয়ামী লীগের হাতে, এবার খেলো তাদেরই দোসর জামাতের কাছে। অন্যদিকে ইসলামী দলগুলো স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে জামাতের সাথে হাত মিলিয়ে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য।

বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে জামাতের ৩০% প্রতিনিধিত্ব দৃশ্যমান থাকলেও অচিরেই তা ৮০% পরিলক্ষিত হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে এবং অতি কৌশলে। নতুন নতুন এমন উপদেষ্টা আসবে যাদেরকে কেউ সরাসরি জামাত বলতে পারবে না, কিন্তু তারা জামাতই। যেমনিভাবে এখন নাহিদ, আসিফ, আসিফ নজরুল, মাহফুজ আলমদের আমরা চিনি জানি কিন্তু ট্যাগ দিতে পারছি না।

যাদের ধারণা বিপ্লব শেষ, তারা অফ যান। এটি জামাতি গোপন বিপ্লবের প্রথম ধাপ মাত্র। এ বিপ্লব প্রকাশ্যে আনতে তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় যেতে তাদের সামনে অনেকগুলো ধাপ এখনও বাকী! ওয়েট এন্ড সী।

জামায়াত নেতাকর্মীরা সবসময়ই বলে থাকে, তারা ক্ষমতার রাজনীতি করে না। এবং আশ্চর্য্য ও ভয়ের কথা হলো, দেশের শিক্ষিত সমাজসহ অনেকেই তা বিশ্বাস করে।

আদতে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলের মতই জামায়াত ক্ষমতার রাজনীতিই করে। যারা মনে করেন, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত জয়ী হতে পারবে না, তাদের এমন ভাবার দিন শেষ হয়ে এসেছে। ভোটের মাঠেও জামায়াত তার ইসলামি মিত্রদের নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। কিন্তু জামায়াত জাস্ট ‘ভোটে ক্ষমতা এখনই পেতে চায় না” আর এটাকে বাংলার জনগণ ‘জামায়াত জীবনেও ভোটে জিতে ক্ষমতা পাবে না’ আত্মতুষ্টিতে ভুগছে।

ক্ষমতা নানা প্রকারের হতে পারে। সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো কলকাঠি নাড়ানোর ক্ষমতা। ১০০টা সাংসদের চেয়ে কলমের খোঁচায় যারা প্রজেক্ট পাস করায় এমন ১০০টা সচিব পকেটে রাখাটা হলো ক্ষমতা। এমনভাবে শিক্ষা, সেনাবাহিনি, আদালতপাড়া দখলে নিজ আদর্শের কর্মী দ্বারা আচ্ছাদিত রাখাটাই হলো ক্ষমতা।

আমরা শুধু ব্র‍্যাক, বেলা, গ্রামীণব্যাংককেই চিনি এঞ্জিও হিসেবে। কিন্তু জামায়াত ও ইসলামি দল্গুলোর হাতে কত এঞ্জিও আছে তার হিসাবউ এঞ্জিও ব্যুরোরও নেই। গ্রামবাংলার মানুষের ঘরে এসব এঞ্জিওদের মাধ্যমে মানুষের আস্থার ক্ষমতা দখলে নিয়েছে জামায়াত। এ কারণে এ এঞ্জিওগ্রাম সরকারের সাথে জামায়াতের সখ্যতাও গড়ে উঠেছে। এঞ্জিওদের কাজ তো জানেনই, আপনার দুর্দশা দূর হবে না, বরং আপনার ঋণ বাড়বে, অথচ আপনি খুশি থাকবেন এ ভেবে যে আপনি বেঁচে আছে। অনেকটা ইসরায়েলীদের মতো। তারা গাজাবাসীদের ঠিক ততটুকুই প্রোটিন সাপ্লাই করে, যতটুকু খেয়ে বেঁচে থাকা যায়।

জামায়াত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আপাতত চায় না, তবে তারা ক্ষমতা অবশ্যই চায়। সংসদ নয়, কোনোদিন দেখবেন আপনার বৈঠকখানা দখল হয়ে গেছে জামায়াত দ্বারা।

সুতরাং ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে জামায়াতের ইলেকশন চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাদের চাওয়া বিপ্লবের পরবর্তী ধাপে যাওয়া। আর আমেরিকার চাওয়া, ইসলামী শাসন ব্যবস্থার কায়েমের নামে কোন এক সময় জঙ্গীবাদের উত্থান হলে পরে তা দমনের অজুহাতে সশরীরে হাজির হওয়া এবং ফাইনালি সেন্টমার্টিনে অবস্থান নেওয়া।

ওয়াকার আর বিএনপির জন্য সমবেদনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top