মাসিক ২ লাখ টাকা বেতনে একটি বিমান কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন। তাও যেই সেই পদ নয়, একেবারে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে শরীফকে নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুধু এই এয়ারলাইনস কোম্পানি নয়, এর বাইরে আরও ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দুদকের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি থেকে তাকে জয়েনিং লেটার অর্থাৎ নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শরীফকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাহসী কাজ করতে গিয়ে চাকরি হারান দুদকের পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সাবেক কর্মকর্তা। চাকরি ফেরত চেয়ে তিনি দুদকের দ্বারে দ্বারে মাসের পর মাস ধরে ঘুরছেন। চাকরিচ্যুতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন। কিন্তু তার আবেদনে সাড়া দেওয়া হয়নি।
এমনকি তিনি চাকরি ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও দুদক থেকে তার বিরুদ্ধে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এমন বাস্তবতায় দিশেহারা হয়ে পড়েন শরীফ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকাই তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তিনি চট্টগ্রামে তার ভাইয়ের এক মুদির দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসলে সবাই ইতিবাচকভাবে শরীফের এই দুর্বিসহ জীবনের কথা তুলে ধরে।
জানা গেছে, গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নজরে গেলে তারা শরীফকে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। তবে শরীফ এ বিষয়ে এখনই কোনো কথা বলতে চান না।
তবে তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই আমার পাশে থাকার জন্য। তাদের কারণেই আমি অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।’
বুধবার দুপুরে শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে আমি ভিকটিম হয়েছি। দুদক যেখানে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কথা, সেখানে আমার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আমি এই অংক মেলাতে পারছি না এখনো। আমার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি কমিশন। পারবেও না ইনশাআল্লাহ।’
শরীফ আরও বলেন, ‘আমি আমার সততার সবটুকু দিয়ে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। অনুসন্ধান করেছি, তদন্ত করেছি, মামলা করেছি। এটা যদি আমার অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে দুদকে যারা ভালো কাজ করে তারা সবাই অন্যায় করছে। আর যদি আমার কাজ সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে দুদকের উচিত আমার পাশে দাঁড়ানো।’
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফকে দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আদেশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৫৪(২)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
তবে সেই নোটিশে চাকরিচ্যুত করার নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি খোলাসা করাও হয়নি। তার চাকরি ফেরত দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুদক কর্মকর্তারাও মাঠে নেমেছিলেন। এতকিছুর পরও চাকরি ফেরত পাননি শরীফ।