Close

নাহ, মেয়েটা বাবার মতো হয়নি

অমি রহমান পিয়াল: নাহ, মেয়েটা বাবার মতো হয়নি। এটি একটি টেকনিকাল মন্তব্য, শেখ মুজিব প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ থেকে শেখ হাসিনায় যাবতীয় গরল উগড়ে দেওয়ার সুশীল টেকনিক। চেহারার ছাদটা ভালো করে যে কেউ লক্ষ্য করলেই বুঝবে মুজিব কতখানি প্রবলভাবে আসীন তার বড়মেয়ের মুখচ্ছবিতে।

নাহ, মেয়েটা বাবার মতো হয়নি। কারণ বাবার মতো রহম ওই দিল ধারণ করে না। ভালো মতো দেখো ছবিটা। ছয় বছর পর নিজের মাতৃভূমিতে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। প্রিয় বাবা-মা, তিন তিনটি ভাই, দু্ভায়ের স্ত্রী, চাচা, ফুফাতো ভাই- লাইন ধরে মেরেছে ঘাতকেরা। দূর প্রবাস থেকে ডুকরে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না। একমাত্র জীবিত স্বজন ছোটবোনটিকে নিয়ে তারপর পরের বাড়িতে পরের দয়ার আশ্রয়। ছয় বছরের নির্মম বনবাস। ছয়টি বছর শরণার্থী পরের দয়ায়। জাতির জনকের কন্যা কিনা নিজদেশেই অবাঞ্ছিত।

তারপর একদিন ফেরা হয়। ১৭ মে ১৯৮১। দৃশ্যটা দেখো, ধারণ করো। বুঝতে পারছো সেই আকুতি, ধরতে পারছো এক এতিমের ফরিয়াদ? ইউ লাউজি বা*স্টার্*ডস। ’৭৫ এর খুনীরা পার পায়নি, ‘৭১এর খুনীরাও পাবে না। নাহ, মেয়েটা বাবার মতো হয়নি, তার দিলে রহম নেই কোনো। প্রতিজ্ঞা তাকে ঋদ্ধ করেছে আরো। বাঁচতে হলে তাকে মারতে হবে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! বুলেট-গ্রেনেড যে তারে ছোঁয় না!!

পুরানো লেখা থেকে : ‘৮১ সালে ছয় বছরের প্রবাস (পড়ুন নির্বাসন) থেকে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা। ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর যেসব শ্লোগান শুনেছিলেন, তার একটি ছিলো ‘হাসিনা তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই’। শ্লোগানকে শ্লোগান হিসেবে নেওয়াই দস্তুর। নেতানেত্রীরা তাই নেন। কারণ রাজনৈতিক শ্লোগানে ছেলেও বাবাকে ভাই ডাকে। সাত বছর পর শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই বিস্ময়ভরে আবিষ্কার করেছিলেন, কথাগুলো নেহাতই কথার কথা ছিলো না।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। লালদিঘির ময়দানে সেদিন আওয়ামী লীগের জনসভা ছিলো। শেখ হাসিনার ওপর সেদিন নির্বিচার গুলি ছুড়েছিলো এরশাদ সরকারের পুলিশ ও সাদা পোষাকধারীরা। কিন্তু গুলি তাকে ছোঁয়নি। দেয়ালে বিধেছে। মানুষের সে দেয়াল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। হাসিনার ভাইদের দেয়াল। মাথায় গুলি খেয়ে সীতাকুন্ড কলেজের জিএস যখন উল্টে পড়েছেন, তার জায়গা নিয়েছেন একজন শ্রমিক নেতা। রক্তাক্ত সে দেয়ালের নিরেট দূর্ভেদ্যতা অটুট ছিলো। একটা ইট খসে গেলে সেখানে বসেছে আরেকটি ইট। শেখ হাসিনা নিরাপদ ছিলেন। সেদিন আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল ছিলো রণক্ষেত্র- জান দেবো, লাশ দেবো না। রাত বারোটা পর্যন্ত চলেছে থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের বিরুদ্ধে ইট পাটকেলের লড়াই।
১৬ বছর পর, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আবার ভাইদের কাছে ঋণী হয়েছেন হাসিনা। এদিনকার হামলা আরো ভয়ানক ছিলো। গুলির পাশাপাশি ছিলো আর্জেস গ্রেনেড। তুমুল বিস্ফোরণেও হাসিনার ভাইয়েরা ভুলে যায়নি তাদের প্রতিজ্ঞা। শরীরে অজস্র স্প্লিন্টার আর বুলেটের গর্ত নিয়েও দাঁড়িয়ে গেছে মানব দেওয়াল। মৃত্যু দিয়ে বোনের নিশ্চিত মৃত্যুকে ফিরিয়েছেন তারা।
স্বীকৃতির পরোয়া করে না এসব মৃত্যু। আত্মাহুতির বিনিময়ে প্রতিদান চায় না। আক্রমণ থেমে থাকবে না। আরো হবে। হুমকি আসে জনসভা থেকে। জাতির জনকের মৃত্যুদিনে বিশাল কেক কেটে আনন্দ উদযাপন করিয়েরা হুমকি দেয় আবারও। শেখ পরিবারকে নির্বংশ করার সেই মিশন থেকে তারা সরবে না। বোকা এই খুনীগুলো, তাদের মুখপাত্রগুলো ভুলে যায় সেই ভাইদের কথা। হাসিনার বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পর্যন্ত যাওয়ার আগে কতগুলো শরীর ভেদ করতে হবে তাদের ছোঁড়া গুলিকে। এত বুলেট কোথায় পাবি তোরা! তাদের পারুল বোনটির জন্য সাত ভাই চম্পারা যে শত শত, হাজার হাজার, লাখ লাখ হয়ে যায়।…

লেখক: ব্লগার, কলামিষ্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top