Close

রাজনীতির মাঠে জিএম কাদের গুড বয়, পশ্চিমাদের ভাষ্য

রেজা কিবরিয়াকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার পিছনে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যখন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল গঠন করা হয় তখন সুশীল সমাজের আগ্রহেই রেজা কিবরিয়া এই নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদান করেন। রেজা কিবরিয়াকে বাংলাদেশের হামিদ কারজাই বানানোর একটি নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টার অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছিলো বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়ার রাজনৈতিক কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে ধরে-বেঁধে ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থেকে তিনি নির্বাচন করেন, এরপর তিনি ড. কামাল হোসেনের দলে যোগদান করেন এবং ওই দলের নেতাও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে নুরের দলে যোগদান করে তিনি তার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রেজা কিবরিয়া নিজস্ব কোন পরিচয় নাই। বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ এবং সুশীল সমাজ তাকে যেভাবে পরিচালিত করে সেভাবে তিনি পরিচালিত হন। সাবেক বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির অর্থনৈতিক বিশ্লেষক রেজা কিবরিয়া একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। এরকম ব্যক্তিকে নিয়েই সুশীল সমাজ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের পটভূমি তৈরি করার ক্ষেত্রে রেজা রেজা কিবরিয়াকে সামনে আনা হয়েছিলো। কিন্তু রেজা কিবরিয়া কিছুদিনের রাজনৈতিক জীবন প্রমাণ করে দিয়েছে তিনি রাজনীতিতে অচল, অযোগ্য। রাজনীতি করার মত যে মানসিকতা, সব মানুষের সাথে মেশা এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন সেটার যথেষ্ট অভাব তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এজন্যই রেজা কিবরিয়া ব্যাপারে ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছে সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা দেশগুলো।
রেজা কিবরিয়ার বিকল্প হিসেবে এখন রাজনীতির মাঠে নামানো হয়েছে জিএম কাদেরকে। জিএম কাদের জাতীয় পার্টির নেতা। এরশাদকে স্বৈরাচারী বলা হলেও জিএম কাদের রাজনৈতিক জীবনে একটি পরিচ্ছন্ন, মিতভাষী এবং স্বচ্ছ ইমেইজ তৈরি করেছেন। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবেও নিজেকে দুর্নীতি থেকে দূরে রেখেছেন বুয়েটের সাবেক এই ছাত্র। তিনি মার্জিত এবং ভদ্রজনে হিসেবে পরিচিত। সুশীল সমাজের সাথে তার আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে যে, জাতীয় পার্টির জন্ম এবং জাতীয় পার্টির অতীত কর্মকাণ্ডকে ছাপিয়ে জিএম কাদের একটা নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন। জিএম কাদেরকে রাজনীতির মাঠে একজন ভালো মানুষ বা গুড বয় মনে করা হয়। সেজন্যই এখন জিএম কাদেরকে মাঠে নামানো হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ বা রেজা কিবরিয়ার দল দিয়ে যেমন বড় ধরনের আন্দোলন করা সম্ভব না, তেমনি নেতৃত্বও আনা সম্ভব নয় বলেই এখন নেপথ্যে থেকে ক্রিয়াশীল তৃতীয় শক্তি গুলো মনে করছে। আর সে কারণেই জিএম কাদেরকে অনেক গ্রহণযোগ্য মনে করা হচ্ছে। কারণ, জিএম কাদের এখন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চেয়ারপারসন। এছাড়াও তার একটা আলাদা ইমেজ রয়েছে। জাতীয় পার্টির এখনো কিছু কর্মী এবং সমর্থক রয়েছে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে জিএম কাদেরের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততার একটি যোগসূত্র পাচ্ছে সুশীল এবং পশ্চিমা দেশগুলো। পাশাপাশি বিএনপি এখন নেতৃত্বের সঙ্কটে ভুগছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন যেহেতু বিএনপি করেছিলো সেজন্য বিএনপির এরশাদের ব্যাপারে এক ধরনের আড়ষ্টতা এবং বিমুখতা ছিল। কিন্তু জিএম কাদের জাতীয় পার্টির নেতা হলেও এরশাদের অবস্থান থেকে তার অবস্থান যোজন যোজন দূরে। এ কারণেই তিনি এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের মুল ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন রেজা কিবরিয়াকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট শেষ, জিএম কাদেরকে দিয়ে নতুন নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ নিরীক্ষায় যদি জিএম কাদের উত্তীর্ণ হতে পারেন তাহলে জিএম কাদেরই হতে পারেন বাংলাদেশে পরবর্তী হামিদ কারজাইয়ের মত কেউ। তবে শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের তার নিজের দলকেই সংহত রাখতে পারবেন কিনা বা নিজের দলে টিকতে পারবেন কিনা সেটিও একটি বড় প্রশ্ন বটে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top