ফজলুল বারী: শেখ হাসিনা পালিয়েছেন এটা ছড়ালো কী করে? আমার তথ্য বলে, শেখ হাসিনা পালাননি। তাকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করেছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর চাপে শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হলেও দেশ ছেড়ে যেতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু সেনা কর্মকর্তারা তাকে বলার চেষ্টা করে তাঁকে এখানে মেরে ফেলা হতে পারে। শেখ হাসিনা তখন জেদ দেখিয়ে বলেন, মেরে ফেললে মেরে ফেলবে। আমার কবর যাতে টুঙ্গিপাড়ায় বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোলের মধ্যে হয়। তবু আমি এভাবে দেশ ছেড়ে যাবোনা।
সেনা কর্মকর্তারা তখন শেখ রেহানাকে আলাদা রুমে নিয়ে বোঝান এবং তাকে (শেখ রেহানা) রাজি করান। কিন্তু তাতেও শেখ হাসিনাকে রেহানা রাজি করাতে পারেননি। তখন ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের সংগে সেনা কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলে তাদেরকে রাজি করান। জয়, পুতুল তখন রাজি করান তাদের মাকে। কোন ছেলে বা মেয়ে তাদের মায়ের মৃত্যু কামনা করে।
শেখ হাসিনা তখন দুদিনের সময় চান। এই সময়ে তিনি দলের নেতা কর্মীদের সংগে আলাপ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। কারন আগের রাতেও তিনি দলের নেতাদের বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেননা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দেশত্যাগ দূরের কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলেমেয়ের চাপে দেশত্যাগে রাজি হলেও শেখ হাসিনা যেতে চেয়েছিলেন টুঙ্গিপাড়ায়। কিন্তু তাতেও রাজি হননি সেনা কর্মকর্তারা তাকে বলা হয় আপনাকে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট সময় দেয়া যেতে পারে। এই ৪৫ মিনিট সময়ের মধ্যে আপনাকে চলে যেতে হবে। নতুবা এরমাঝে আন্দোলনকারীরা গণভবনে চলে আসতে পারে।
তখন শেখ হাসিনাকে ভারতে কথা বলতে বলা হয়। যাতে ভারতীয় কোন বিমান এসে তাকে নিয়ে যায়। শেখ হাসিনা তখন সরাসরি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংগে কথা বলেন। মোদী তাকে নিয়ে যেতে একটি সামরিক হেলিকপ্টার পাঠাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে আবার ফোন করেন। শেখ হাসিনাকে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ভারতীয় কোন বিশেষ বা সামরিক যান এভাবে আরেক দেশে যেতে পারেনা। শেখ হাসিনা ভারত পর্যন্ত চলে এলে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
তখন সেনা প্রধান বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে হাসিনার ভারত যাবার ব্যবস্থা করেন। যাবার আগে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। তেজগাঁও হেলিপ্যাড থেকে সেই হেলিকপ্টার হাসিনা রেহানাকে আগরতলা নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটা মালবাহী বিমান তাদেরকে নিয়ে যায় দিল্লির উৎকন্ঠে গাজিয়াবাদ হিন্দন এয়ারবেসে। শেখ হাসিনা ঢাকা ছাড়ার পরপর সেনা কর্মকর্তারা তার পদত্যাগপত্র নিয়ে ছোটেন বঙ্গভবনে। মিডিয়ায় প্রচার কথা হয় শেখ হাসিনা পালিয়েছেন।
অথচ একজন রিপোর্টারও এ ব্যাপার সেনা প্রধান বা কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট করেননি বা এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করেননি। এভাবে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন রিপোর্ট করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতবিহবল হয়ে পড়েন। আক্রমন শুরু হয় আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর স্থাপনায়। এখন পর্যন্ত মিডিয়া প্রচার করে বেড়াচ্ছে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন! এই মতলবি ধান্ধাবাজির প্রচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দেশকে ধংস করা হচ্ছে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক